বাংলাদেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমানের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ছেষট্টি; এখনো অনেক কবিতা অগ্রন্থিত রয়েছে। তিরিশি কবিতায় আধুনিকতার বলয়ে তাঁর আবির্ভাব পঞ্চাশের দশকে, কিন্তু একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের মানচিত্রে, পৃথক ভাষা চারিত্র্যে ও আলাদা রাষ্ট্রীয় জীবনভূমে। এই রাষ্ট্র যা প্রথমে ছিল পূর্ব পাকিস্তান, ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে দীর্ঘ সময়প্রবাহ এবং পরবর্তী আশি-নব্বইয়ের দশক, এমনকি একুশ শতকের শূন্য দশকের (২০০৬ মৃত্যু) প্রথম ভাগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল তাঁর লেখালেখি। মূলত কবি হিসেবে দেশ-সমাজে প্রতিষ্ঠালাভ ঘটলেও তিনি আগ্রহী ছিলেন গান, ছড়া, অনুবাদ কবিতা, নাট্যানুবাদ, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, উপন্যাস রচনায়ও। সাংবাদিকতার জীবনে তিনি বেশ কয়েকটি পত্রিকায় কলামও লিখেছেন। সেই সূত্রে বলা যায়, তাঁর রচনার পরিমাণ বিপুল ও বিচিত্র। শ্রেষ্ঠ শামসুর রাহমান গ্রন্থের দুটি খণ্ড বিপুল রচনার নির্বাচিত গ্রন্থাদি ও লেখালেখি নিয়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এই প্রথম খণ্ডে আছে প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে থেকে বন্দি শিবির থেকে পর্যন্ত নির্বাচিত কাব্যগ্রন্থ, আছে খাজা ফরিদ ও রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার অনুবাদ, কিশোরতোষ ছড়া, গান, নাট্যকাব্য, ছোটগল্প, দুটি উপন্যাস, স্মৃতিকথা, চিঠিপত্র এবং পরিশিষ্ট অংশে আছে গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত রচনার পরিচিতি, জীবনপঞ্জি ও গ্রন্থপঞ্জি। প্রথম খণ্ডটি যেমন বৈচিত্র্যপূর্ণ তেমনি শামসুর রাহমানের নানামাত্রিক লেখকসত্তার পরিচায়কও বটে। কবি নিছক কবিতাচর্চায় বদ্ধ থাকেন না, শিল্প-সাহিত্যের নানা ধারায় তাঁরা বিচরণ করে থাকেন। শামসুর রাহমানের বহুবর্ণময় পরিচয়ে এই খণ্ডটি হয়ে উঠেছে উজ্জ্বল ও বিশিষ্ট।
গবেষক ও প্রবন্ধকার বেগম আকতার কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পিতা মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, মা মজিদা বেগম। বেগম আকতার কামাল ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘বিষ্ণু দে-র কবিমানস ও কাব্য’ শীর্ষক গবেষণার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।