"শঙ্খরঙা জল" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: লেখালেখি নিয়ে আমার অনুভূতিটা এমন, যেন একটি পথের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আমি। সবে হাঁটতে শুরু করেছি। এই পথের গন্তব্যে যেতে চাই না। শুধুই হেঁটে যেতে চাই। চলার পথে সকল শুভাকাঙ্খি হচ্ছে বৃক্ষরাজির মতন। শান্ত, সবুজ বিস্তৃত ডালপালা এগিয়ে যাবার প্রাণশক্তি জোগায়। তেমনি করে কিছু মানুষ অনুপ্রেরণা হয়ে সঙ্গে ছিল সেই শুরু থেকে। আছে, থাকবে, এমনটাই আশা করি। ‘শঙ্খরঙা জল’ আমার কাছে কাগজে সেঁটে দেয়া একখণ্ড জীবনের মতন। যে-ই জীবনে আমি নিজেই হয়ে উঠেছি অজোপাড়া গাঁয়ের সেই কুমু। যার জন্ম হয়েছিল তীব্র বর্ষণমুখাের বিষন্ন কোন ক্ষণে। যার শুরুটাই হয় হারিয়ে যাওয়ার গ্লানি নিয়ে। ওর মতনই অনুভব করেছি-বেঁচে থাকার জন্যে জীবনে একান্ত কিছু মানুষের প্রয়ােজন। কিছু না হলেও অন্তত কেউ একজন। মাথার উপর পােক্ত ছায়া সরে যাবার পর দীঘির জলে কলমির মতন ভেসে চলেছি ওর হাত ধরেই। আমিই শিরিন হয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছি প্রিয় মানুষটির জন্য। অনর্থক অপেক্ষা। হারুনের মতন উপলব্ধি করেছি সদ্য জন্ম নেয়া পুত্রের তুলতুলে স্বর্গীয় হাতের স্পর্শ। আমি চাই, পাঠক ঠিক আমার মতন করেই অনুভব করুক। কুমুর মতন, খুব কাছেই অবহেলায় পড়ে থাকা মানুষটির হৃদয়ের ভালােবাসার বিশালতা দেখে বিস্মিত হােক। মানুষের অন্তরে লুকায়িত ভালােবাসা আবিষ্কার করার মতন সুখকর আর কী আছে? যে ভালােবাসা অবিনশ্বর। মানুষটি চলে গেলেও থেকে যায়, বেঁচে থাকা এবং সামনে এগিয়ে যাবার উৎস হয়ে ওঠে।
তানিয়া সুলতানার জন্ম কুমিল্লার জানঘর গ্রামে। ১৯৯৯ সালে ঢাকা ছেড়ে সপরিবারে পারি জমান ইটালির রোম শহরে। তারপর ওখানেই বেড়ে ওঠা এবং পড়াশোনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন ট্যুরিজমের ওপরে। শৈশব থেকে মাতৃভাষার টানে রোমে অবস্থিত ছোট্ট একটি লাইব্রেরি থেকে বাংলা গল্প-উপন্যাস সংগ্রহ করার মাধ্যমে বইয়ের জগতে প্রবেশ। পড়তে পড়তেই লেখার আগ্রহ হৃদয়ে লালন করা। বিভিন্ন রকমের গল্প নিয়ে কাজ করতে আগ্রহি তিনি। ভালোবাসেন কবিতা লিখতে। তার প্রথম মৌলিক উপন্যাস ভাঙা জোছনা ২০১৬-এর বইমেলায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তিতে শঙ্খরঙা জল, আলবা নেরা, সিসিফাসে বন্দি এবং নৃসংশয়সহ বেশ কয়েকটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সঙ্কলনে প্রকাশিত হয়েছে কিছু ছোটোগল্প। লেখালেখি ছাড়াও ছবি আঁকার নেশা রয়েছে তার। নিজেরসহ অন্যান্য লেখকদেরও কিছু প্রচ্ছদ এঁকেছেন তিনি।