... জোয়ান বাস্তবের মুখােমুখি । প্রথম সমস্যা, কী জামাকাপড় পরবে? দখলদার বাহিনির হাতে বিপর্যস্ত একটি দেশে একটি মেয়ে ঘােড়ায় চেপে যাচ্ছে, এটা তাে রীতিমত আতঙ্কের ঘটনা। আর সে যদি সেপাই-শাস্ত্রী নিয়ে যুদ্ধে যায়, তবে তাে তাকে পুরুষের পােষাকই পরতে হবে। ভােকুলের লােকজন নিজেদের থেকেই এগিয়ে এল, ওপরে ও নিচে পরিধান করার অন্তর্বাস, ভারি বুট জুতা, কুঠার এইসব তারাই উপহার দিল। সুন্দর একটা ঘােড়াও জোয়ান তাদের কাছ থেকেই পেল । গভর্নর রােবেয়ার দু বােড্রিকুর দিলেন একটি তলােয়ার। জোয়ানকে চেনাই যায় না যেন। বাকিটা জোয়ান নিজেই করল, পিঠের উপর ছড়ানাে ঘন দীঘলকেশ নিজের হাতেই কচকচ করে কেটে ফেলল। বাহ এবারে তাে জোয়ানের যুদ্ধের সাজ শেষ হলাে... রূপকথার মতাে তার জীবন। অনুকরণযােগ্য তার দেশপ্রেম এবং উদ্যম। তার সততা দৃষ্টান্তযােগ্য। ঘােড়ায় চড়তে জানতেন না, যুদ্ধ করলেও যুদ্ধের নিয়ম কানুন কিছুই জানতেন না। অথচ তাকে দেখলেই সৈন্যরা সাহসী হয়ে উঠত। দুর্জয় সাহসী, গভীর দেশপ্রেমের অধিকারী, নির্ভীক চিত্তের জোয়ান অব আর্ক যুদ্ধক্ষেত্রেও করুণার প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছিলেন। তার মৃত্যু ফরাসীদের মনে নতুন চেতনা, নতুন উদ্দীপনা এনে দেয়। ফ্রান্সে ইংরেজদের অবরােধের চিহ্নই তারা মুছে ফেলে ।
আসাদ চৌধুরী। জন্ম ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩, উলানিয়া, বরিশাল। বাংলাদেশের কবিতায় ‘তবক দেওয়া পান’ নিয়ে আসাদ চৌধুরীর আর্বিভাব। স্বল্পবাক, ঋজু এবং বক্তব্য প্রকাশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিকীর্ণ এই কবি, বাংলাদেশের ষাট দশকের কবিতায় সংযোজন করেছেন নতুন মাত্রা। এ মাত্রা লক্ষণীয় তাঁর ভাষা ও প্রকরণে; যেখানে তিনি ঐতিহ্য, শে¬ষ, প্রেম, সৌন্দর্য ও মরমি চেতনার সংমিশ্রণ ঘটান। আসাদ চৌধুরী, তাঁর কবিতায় মরমি-মানসিকতা নিয়ে বাঙালি জাতির ঐতিহ্যকে অনুসন্ধান করেছেন। আর তাই ছন্দে মেজাজে এবং বক্তব্যে তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় এক যুগ সময়। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এবং জয়বাংলা পত্রিকায় কাজ করেন। জার্মানির কোলনের ভয়েস অব জার্মানির বাংলা বিভাগের বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন (১৯৮৫-৮৮)। বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন প্রায় ছাব্বিশ বছর। আসাদ চৌধুরী কবিতা আবৃত্তি করেন। বেতার টিভিতে উপস্থাপনা করেন। প্রচুর নাটক সিনেমা দেখেন। ভ্রমণ তার নেশা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোতেই তার আনন্দ। সব বয়সী পাঠকের জন্য কবিতা, প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি বিশেষভাবে ছোটদের জন্য লিখেছেন ছড়া-কবিতা, রূপকথার গল্প, অনুবাদ এবং জীবনীগ্রন্থও। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৭), অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২), একুশে পদক (২০১৩) সহ অসংখ্য পুরস্কার। সদা হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণচঞ্চল চির তারুণ্যের প্রতীক আসাদ চৌধুরী ছোট বড় সকলেরই প্রিয় মানুুষ।