ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ আমাদের কালের সবচেয়ে খ্যাতিমান বক্তা। কথার ইন্দ্রজালে শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন তিনি। যেমন মঞ্চে, তেমনি টেলিভিশনে তাঁর উজ্জ্বল রমনীয় কথামালা তাঁকে এ যুগের বহু মানুষের প্রিয় ব্যক্তিত্ব করে তুলেছে। তাঁর বক্তৃতায় একই সঙ্গে পাওয়া যায় কবিতার স্বপ্নীল লালিত্য, হাস্যরসের দীপ্তি, বুদ্ধির ছটা আর জীবন ও পৃথিবী সম্বদ্ধে গভীর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি। সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর বক্তৃতায় আলোড়িত হয়ে ওঠে তাঁর ভেতরকার অপরাজিত আশাবাদ। এসব কারনে তাঁর বক্তৃতা শ্রোতাদের কেবল মোহিতই করে না, করে তোলে উজ্জীবিত, উদ্দীপ্তি ও অনুপ্রাণিত। সভাসমিতিতে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া তাঁর এসব বক্তৃতার কয়েকটির লিখিতরূপ তৈরি করে এরই মধ্যে তাঁর তিনটি বক্তৃতার বই বেরিয়েছে।এবার বের হল তাঁর চতুর্থ বক্তৃতার বই : ‘স্বপ্নের সমান বড়।’ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সাফল্য নানা দিকে। যে গুণটির জন্য তিনি দেশের সবার ভরসার স্থল হয়ে রয়েছেন সে হল তাঁর স্বপ্নচারিতা ও আশাবাদ। আশাবাদের এই ফেরিওয়ালা উচ্চতম জীবনের যে স্বপ্ন দেখেন এই বইয়ের প্রতিটি শব্দেই যেন তা স্পন্দমান। এ বইযের প্রতিটি লেখা তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে, স্বপ্নের পৃথিবী, স্বপ্নের মানুষত্বকে স্পর্শের আকুতিতে বাঙ্ময়। অসাধারণ ও অনবদ্য ভাষায় দেওয়া এই বক্তৃতাগুলো বাংলাসাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ। আনিসুল হক
ভূমিকা গত পঞ্চাশ বছর ধরে শিক্ষকতা আমার পেশা ও নেশা। ক্লাসঘরে বক্তৃতা করা তাই আমার নিয়তি। এছাড়াও গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে এদেশের নানা স্কুল-কলেজে, সভা-সমিতিতে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বা সেমিনারে আমাকে হাজার হাজার বক্তৃতা দিতে হয়েছে।এমনও দিন গেছে যেদিন সকাল থেকে রাত-পর্যন্ত সময়-পরিসরে ছ’সাতটা বক্তৃতাও করেছি। নির্বিকার নির্বিচার ক্লান্তিহীন সেসব বক্তৃতা। অনুষ্ঠানের আয়োজদের হুকুমে ও চোখ-রাঙানির মুখে বক্তৃতাগুলো করতে হয়েছে বলে পৃথিবীতে হেন বিষয় নেই, যে বিষয়ে কথা বলতে হয়নি। একদিন বক্তৃতা করতে করতে হঠাৎ টের পেলাম ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের ওপর বক্তৃতার পরই আমি বক্তৃতা করছি ঢাকার সুয়্যারেজ সিস্টেমের ওপর। ভারতচন্দ্র লিখেছিলেন, ‘সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তার।’ বেশি বলতে গিয়ে মিথ্যা কথা কত বলেছি জানি না, কিন্তু এত বিশ্রামহীনভাবে কথা বলতে থাকলে গলার স্বর নষ্ট হওয়ার কথা। আমারও হয়েছে তাই। ফলে বক্তৃতা করার ভবযন্ত্রণা থেকে সম্প্রতি আমি অনেকটা মুক্তি পেয়েছি। বিভিন্ন সমযে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর যেসব বক্তৃতা করেছি তার অল্পকিছু বক্তৃতা নানাজনের বিভিন্ন উৎসাহে মাঝে-মধ্যে টেপ করা হয়ে গিয়েছিল।ত তার বেশ কিছু বক্তৃতা লিখিত রূপ তৈরি করে ও কিছুটা ঘষামাজা করে এর আগে আমি তিনটা বক্তৃতার বই বের করেছি। এবার বের করলাম চতুর্থটি। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ০৯.০২.২০১২
সূচিপত্র *যুগান্তরের প্রতীক্ষায় *রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা-স্বপ্ন *সবচেয়ে ভালোবাস মাতৃভাষাকে *ক্লসঘরের কথা : দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্র সি *ক্লাসঘরের কথা : ড. জেকিল ও মি. হাইড *শিশুর মতো পবিত্র *ঘরের ভেতরে একটুকরো প্রকৃতি *আলোর ফেরিওয়ালা *ইব্রাহীম ফাত্মী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একইসাথে একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিকও। আর সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে জড়িয়ে থাকায় একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও পরিচয় লাভ করেছেন তিনি। এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কলকাতার পার্ক সার্কাসে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কামারগাতি গ্রাম। পাবনা জিলা স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক এবং বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার্থে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে এখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ঢাকা কলেজ, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আর ষাটের দশকে বাংলাদেশে সাহিত্যের এক নতুন ধারা সৃষ্টির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে, এবং একইসাথে 'কণ্ঠস্বর' নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করে নতুন ঐ সাহিত্যযাত্রাকে করেছিলেন সংহত ও বেগবান। শুধু তা-ই নয়, দেশের মানুষের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে তাদের মাঝে জ্ঞান ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৭৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র', যা চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে এই লক্ষ্যে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমূহ এই ব্যাপারে বিশেষ অবদান রেখেছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'ভাঙো দুর্দশার চক্র', 'আমার বোকা শৈশব', 'নদী ও চাষীর গল্প', 'ওড়াউড়ির দিন', 'অন্তরঙ্গ আলাপ', 'স্বপ্নের সমান বড়', 'উপদেশের কবিতা', 'অপ্রস্তুত কলাম' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক', 'র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার' ইত্যাদি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।