“মেয়ের কাছে বাবার চিঠি” বইয়ের তৃতীয় সংস্করণের ভূমিকা: অধিকাংশ শিশু তার বাবা-মাকে অনুসরণ করে। কিন্তু আমার বাবা-মার মতো অনেকের বাবা-মা এত ভালো সঙ্গী হন না। আমার বাবা-মা সব কিছুতেই উৎসাহী ছিলেন এবং কাউকে উৎসাহী করতে খুব আনন্দ পেতেন। আমি ছিলাম খুব প্রশ্নমুখর। আমার প্রশ্নের উত্তরেই বাবা আমাকে নানা গল্প বলতেন। যার মধ্যে থাকত আমাদের এই পৃথিবী, পৃথিবীতে কীভাবে নারী-পুরুষের বসতি গড়ে উঠেছে, কে কাকে কীভাবে তাড়িয়েছে বা প্রভাবিত করেছে, কীভাবে একের ভাবনা আর এককে প্রভাবিত করে, সেই সঙ্গে সাহিত্য-শিল্প ইত্যাদি। সর্বোপরি তিনি আমাদের এই সুন্দর দেশ সম্বন্ধে বলতে ও লিখতে পছন্দ করতেন। তিনি বলতেন এদেশের কীৰ্তি, চমৎকারিতৃ, পত্তন, পরাধীনতা ইত্যাদি নানা বিষয়। সবচেয়ে গুরুত্বসহকারে তিনি যে বিষয় নিয়ে ভাবতেন তা হলো স্বাধীনতা। তিনি কেবল ভারতবর্ষের স্বাধীনতা নিয়ে ভাবতেন না, তিনি ভাবতেন। সারা বিশ্বের সমস্ত মানুষের স্বাধীনতা নিয়ে। এ বইয়ের চিঠিগুলো যখন লিখেছেন তখন আমার বয়স আট কি নয় বছর। এগুলোর বিষয়বস্তু ছিল পৃথিবীর উদ্ভব এবং মানুষের আত্মসচেতনতা নিয়ে। এ এমন চিঠি নয় যে পড়লাম। আর ফেলে। রাখলাম। এগুলো ছিল মানুষের সজীব দৃষ্টিভঙ্গি এবং চারপাশের জগৎ ও মানুষ সম্বন্ধে উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী লেখা। এই চিঠি প্রকৃতিকে বই হিসেবে পড়ার শিক্ষা দেয়। পাথর, উদ্ভিদ, জীবজন্তু, পোকামাকড় জীবনবৈচিত্ৰ্য নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছি আর রাতে দেখেছি আকাশের তারা। ইতিপূর্বে এই চিঠিগুলো বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। আমি নিশ্চিত বৰ্তমান আকর্ষণীয় পুনর্মুদ্রণ শিশুদের কাছে আরো গ্ৰহণীয় হবে। চিঠিগুলো তাদের ভাবনার মধ্যে নতুন জগতের উন্মোচন ঘটাবে, যেমনটা আমার বেলায় হয়েছিল। - ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লি, ১ নভেম্বর ১৯৭৩
সূচিপত্রঃ * প্রকৃতিকে জানা ১৯ * যেভাবে প্ৰাচীন ইতিহাস লিখিত হলো ২২ * পৃথিবীর সৃষ্টি ২৫ * প্রথম প্রাণের অস্তিত্ব ২৮ * জীবজন্তু এলো ৩২ * মানুষ এলো ৩৫ * আদিম মানুষ ৩৯ * নানা জাতির সৃষ্টি ৪৪ * মানুষের জাতি ও ভাষা ৪৮ * ভাষার সঙ্গে ভাষার সম্পর্ক ৫২ * সভ্যতা কী? ৫৫ * গোত্র বা গোষ্ঠী গঠন ৫৭ * ধর্মের সূচনা এবং শ্রম-বিভাজন ৬০ * কৃষির মাধ্যমে যত পরিবর্তন ৬৩ * যেভাবে গোত্রপতি এলেন ৬৬ * উন্নতি হলো গোত্রপতির ৬৮ * গোত্রপতি রাজা হলো ৭০ * প্রাচীন সভ্যতা ৭৩ * কয়েকটি বড় প্রাচীন শহর ৭৬ * মিশর এবং ক্রিট ৭৮ * চীন এবং ভারতবর্ষ ৮১ * সমুদ্রযাত্রা ও ব্যবসাবাণিজ্য ৮৩ * ভাষা, বর্ণ এবং সংখ্যা ৮৭ * মানুষের শ্রেণিবিভাগ ৮৯ * রাজা, মন্দির এবং পুরোহিত ৯১ * ফিরে দেখা ৯৪ * ফসিল এবং ধ্বংসাবশেষ ৯৬ * আৰ্যদের ভারত আগমন ৯৮ * আর্যরা কেন ভারতে এলো ১০০ * রামায়ণ ও মহাভারত ১০৩
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ও স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ব্যারিস্টারি পেশা ছাড়াও আরেকটি পরিচয় আছে। শুধু ভারতীয় উপমহাদেশই নয়, বিশ্বপাঠকের কাছে তিনি একজন সমৃদ্ধ লেখক। পণ্ডিত নেহরু এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন, ১৮৮৯ সালের ১৪ই নভেম্বর। পনেরো বছরের কিশোর নেহরু বিলেতে পাড়ি জমান, প্রাথমিক শিক্ষার পরের পাটটা বিলেতেই সম্পন্ন হয়। বিলেতে তিনি পড়াশোনা করেছেন হ্যারো ও কেম্ব্রিজে। পড়াশোনা শেষ করার পর পেশা হিসেবে বেছে নেন ব্যারিস্টারিকে। তিনি দেশে ফেরেন ১৯১২ সালে। ফেরার পরই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন, সেসময় বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। অনেকদিন বিদেশে থাকার ফলে অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গল্প তাঁকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সফলতার মুখ দেখবার জন্য তিনি উদগ্রীব হয়ে পড়েন। অসহযোগ আন্দোলনের সময়টাতে দু’বার কারাবরণও করেন নেহরু। মহাত্মা গান্ধী দ্বারা তিনি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত ছিলেন। জওহরলাল নেহরু এর বই সমগ্র পড়লে তাঁর ব্যক্তিজীবনের দর্শন, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অনেকটাই জানতে পারা যায়। কন্যা ইন্দিরা গান্ধীর ছোটবেলায় তাঁর কাছে কিছু চিঠি লিখেছিলেন নেহরু। সে চিঠিগুলো পরে বই আকারে প্রকাশ পায়, ‘লেটারস ফ্রম অ্যা ফাদার টু হিজ ডটার’ নামে; যা পরবর্তীতে বাংলা ভাষায় ‘বাবার চিঠি’, ‘মেয়ের কাছে বাবার চিঠি’ বা ‘কল্যাণীয়াসু ইন্দু’ নামে অনূদিত হয়েছে। শিশু-কিশোরবান্ধব এই বইটিতে পৃথিবীর ইতিহাস, দর্শন সম্পর্কে সহজ ভাষায় অনেক কিছু বলা হয়েছে যা কি না অনেক কম বয়সেই শিশুদের মনের দরজা-জানালা খুলে দিতে ভূমিকা রাখতে পারে। জওহরলাল নেহরু এর বই সমূহ সাধারণত ইতিহাসকেন্দ্রিক ও তাঁর রাজনীতির অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত। ‘পৃথিবীর ইতিহাস’, ‘দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’, ‘টুওয়ার্ড ফ্রিডম’ বইগুলো তাঁর বেশ বিখ্যাত লেখনীর অন্তর্ভুক্ত। এসব বইয়ের তালিকায় তাঁর আত্মজীবনীও রয়েছে।