প্রধানত কবি হলেও শামসুর রাহমান সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও বিচরণ করেছেন। বিশেষত আশি ও নব্বইয়ের দশকব্যাপী তিনি লিখেছেন অজ্র কবিতার পাশাপাশি উপন্যাস, ছোটগল্প, অনূদিত নাটক, নাট্যকাব্য, প্রবন্ধ ও কলাম। কবিতার ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় আঙ্গিকের বিবিধ নিরীক্ষায় প্রেম, দেশচেতনা, আত্মস্মৃতির কথন, মিথ, কখনোবা আন্তর্জাতিক বিশ্বঘটনার অনুষঙ্গ এবং সমকালকে বিধৃত করেছেন। সর্বোপরি রয়েছে তাঁর স্বভাবোচিত কবিতাপ্রেম, শিল্পের জন্য গভীর আর্তি। শ্রেষ্ঠ শামসুর রাহমান দ্বিতীয় খণ্ডে সংকলিত হয়েছে নয়টি কাব্যগ্রন্থ-ইকারুসের আকাশ, মাতাল ঋত্বিক, উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ, কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি, হোমারের স্বপ্নময় হাত, টেবিলে আপেলগুলো হেসে ওঠে, দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে, বুক তার বাংলাদেশের হৃদয় এবং অন্ধকার থেকে আলোয়। নাট্যময়তা ও গীতলতায়, বাস্তব ও পরাবাস্তবের গ্রন্থনায়, চিত্র ও চিত্রলতার বুননে এসব কাব্যের কবিতাগুলি কবিস্বভাবের পরিণতিপর্বকেই বিচিত্রতর করে তুলেছে। এ ছাড়াও রয়েছে গদ্যকবিতার চর্চা। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে তাঁর শেক্সপিয়ার পাঠের অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে হ্যামলেট এবং ইউজিন ও’নিলের মার্কোমিলিয়ানস অনুবাদে। এই অনুবাদকর্ম দুটি খুবই সার্থক এবং রাহমানের কবিপ্রতিভা ও ইংরেজি ভাষাদক্ষতার যুগ্ম প্রকাশ। তিনি বরাবরই অনুবাদে সফল। প্রবন্ধের মধ্যে লক্ষণীয় তাঁর সৃজনশীল চিন্তার পরম্পরা। দেশ, রাজনীতি, সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের প্রসঙ্গে রচিত প্রবন্ধগুলি, বিশেষ করে, আমৃত্যু তার জীবনানন্দ এবং কবিতা এক ধরনের আশ্রয় সংকলন দুটি ধারণ করে আছে যতটা না মননশীল বিশ্লেষণ, তারও বেশি কবির ইমপ্রেশনিস্টিক বয়ান, নিজস্ব অভিমত ও ব্যাখ্যা। এক্ষেত্রে অনন্য রচনা হচ্ছে কলামগুলি। বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদকর্মী হিসেবে লিখিত কলামগুলিও তাঁর চিন্তাভাবনার বিস্তারকে তুলে ধরেছে। শ্রেষ্ঠ শামসুর রাহমান দ্বিতীয় খণ্ডটি এসব রচনারই সুনির্বাচিত একটি সংকলন গ্রন্ত।
গবেষক ও প্রবন্ধকার বেগম আকতার কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পিতা মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, মা মজিদা বেগম। বেগম আকতার কামাল ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘বিষ্ণু দে-র কবিমানস ও কাব্য’ শীর্ষক গবেষণার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।