“চার্বাকেতর ভারতীয় দর্শন ৪ (বেদান্ত)" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ উত্তর-মীমাংসার নামান্তর হলাে বেদান্ত। প্রাচীন ভারতীয় ছয়টি আস্তিক দর্শনের মধ্যে ভাববাদের চূড়ান্ত রূপ এই বেদান্তদর্শনের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। বৈদিক সংস্কৃতির ধারক হিসেবে হিন্দুদের কাছে বেদ সকল জ্ঞানের আকর বলে বিবেচিত। বেদের চারটি অংশ- মন্ত্র বা সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। বেদের চারটি অংশের মধ্যে সংহিতা ও ব্রাহ্মণকে কর্মকাণ্ড এবং আরণ্যক ও উপনিষদকে জ্ঞানকাণ্ড বলা হয়। সুতরাং বেদের অন্ত অর্থাৎ উপনিষদকেই মুখ্যত বেদান্ত নামে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ, উপনিষদ তত্ত্বের দার্শনিক ব্যাখ্যা ও সমর্থনই বেদান্তদর্শন। উপনিষদ বিভিন্ন কালে রচিত হয়েছে এবং তা সংখ্যায় বহু। এগুলাের মধ্যে প্রধান প্রধান উপনিষদগুলি হলাে ঈশ, ছান্দোগ্য, বৃহদারণ্যক, ঐতরেয়, তৈত্তিরীয়, প্রশ্ন, কেন, কঠ, মুণ্ডক, মাণ্ডুক্য, কৌষীতকি, মৈত্রী, শ্বেতাশ্বতর প্রভৃতি। কিন্তু উপনিষদগুলিতে দার্শনিক তত্ত্বাবলী আলােচিত হলেও সে-আলােচনা বহুলাংশেই বিক্ষিপ্ত ও অস্পষ্ট। তা ছাড়া এ-আলােচনা যুক্তিতর্কমূলক সুসংবদ্ধ দার্শনিক আলােচনা নয় এবং নানা উপনিষদে নানা রকম আলােচনার মধ্যে ঠিক কোন তত্ত্বকে প্রকৃত উপনিষদ-প্রতিপাদ্য তত্ত্ব বলা হবে সে-কথা নির্ণয় করাও সহজ নয়। স্বভাবতই, উপনিষদের অনুগামী পরবর্তী দার্শনিকেরা উপনিষদ-প্রতিপাদ্য মূল দার্শনিক তত্ত্বকে সনাক্ত করে যে সুসংবদ্ধ দার্শনিক ব্যাখ্যা দিতে চাইলেন, তা-ই বেদান্তদর্শনের উপজীব্য। দর্শন-চর্চা জ্ঞান-চর্চারই নামান্তর। প্রাচীন ভারতীয় দর্শন আমাদের বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার প্রাচীনতম নিদর্শন। কিন্তু বিশুদ্ধ দর্শনচর্চায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা যে নিতান্তই হতাশাজনক তা বােধকরি বলার অপেক্ষা রাখে না। সেক্ষেত্রে রণদীপম বসু’র বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষিত ভারতীয় দর্শন সিরিজের ‘চার্বাকের ভারতীয় দর্শন-৪ (বেদান্ত-)' গ্রন্থটি এ অপবাদ মােচনে কিছুটা হলেও গতিশীলতা আনবে তা জোর দিয়েই বলা যেতে পারে।