নারী ও পুরুষের মধ্যকার অসমতা আর ধর্ম ও বর্ণপ্রথা-ভিত্তিক সামাজিক পার্থক্য, যা বর্তমান সমাজের মানুষকে নানাভাবে বিভক্ত করে রেখেছে, তাকে মার্কসের শিক্ষার আলোকে ব্যাখ্যা করতে হলে আমাদের শ্রম-সম্পর্কিত কয়েকটা বিষয় ভালোভাবে জানতে হবে, যেমন : উৎপাদন সম্পর্ক, সম্পত্তি সম্পর্ক, শ্রম বিভাজন, সম্পত্তির বিলি-বণ্টন সম্পর্ক, মূল্য, অর্থ, উদ্বৃত্ত মূল্য, শারীরিক শ্রম, মানসিক শ্রম, জমির খাজনা, লাভ, সুদ, উৎপাদনশীল শ্রম, অনুৎপাদনশীল শ্রম, স্বাধীন শ্রম, পারিবারিক শ্রম ইত্যাদি। আরএন এই গ্রন্থে এর কয়েকটা বিষয় সহজভাবে তুলে ধরেছেন।
সমাজে বসবাস করছে এমন প্রত্যেক মানুষকে একটা শ্রম সম্পর্কে প্রবেশ করতেই হয়। কারখানার শ্রমিক, গৃহস্থালি কাজের মানুষ, বাড়ির কাজে আটকে আছে যেসব নারী, জেলখানায় রয়েছে যেসব মানুষ, এতিমখানার মানুষগুলো, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন যারা, রাস্তার ভিক্ষুক এবং অন্য নানা ধরনের কাজের সাথে জড়িত রয়েছে যেসব মানুষ Ñ প্রত্যেকেই একটা-না-একটা শ্রম সম্পর্কের মধ্যে প্রবেশ করতে বাধ্য। মার্কসবাদ বুঝতে হলে এসব সম্পর্কে মার্কসের ব্যাখ্যা কী, সেসব আমাদের জানতে হবে। দুনিয়ার অধিকাংশ দেশ জটিল ও তীব্র এই প্রকৃতির সমস্যাসহ আরও নানা সমস্যায় দারিদ্র্যের বৃত্তে আটকে থেকে, সমৃদ্ধির পথে দেশ এবং দেশের মানুষকে এগিয়ে নিতে পারছে না। তাই মার্কসের চিন্তার সাথে পরিচিত হলে, তার চিন্তার মৌলিক শিক্ষা কী সেসব জানতে পারবো। আর মহান মানবতাবাদী সংগ্রামী এই চিন্তাবিদের শিক্ষার আলোকে আমরা এসব সমস্যা, সমস্যার কারণ কী সেসব ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবো। এভাবে এসব বিষয়ে একটা পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জিত হলেই কেবলমাত্র আমরা এসব বিষয় ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হবো না, এই সম্পর্কিত সমস্যাও কীভাবে সমাধান করতে হবে তাও সুনির্দিষ্ট ভাবে নির্ধারণ করতে পারবো।
রঙ্গনায়াকামা প্রধানত নারীমুক্তির বিষয়কে এই গ্রন্থে মার্কসবাদের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন। বইটা হাতে পেয়ে বারবার পড়েছি, অত্যন্ত সাবলীল ও সহজ উপস্থাপনার কারণে বইটা বাংলায় ভাষান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিলাম।