বাউণ্ডুলে -১৬' বইয়ের শেষের কথা: সুন্দর একটা মন বুকের ভেতর ঝুলন্ত আছে সুমন্তর। বুকটাও অবশ্য আত্মবিশ্বাসে ঠাসা। স্বভাবে কিছুটা উড়নচণ্ডী মনে হলেও কাজকর্মে একটু বাড়াবাড়ি রকমের গোছানো। কথাবার্তায় বেয়াড়া, অনেকটা স্পষ্ট বক্তা। তবে উচ্চারণে আন্তরিক, আন্তরিক সর্বসাকুল্যে । গল্প লিখছে বেশ কিছুদিন থেকে । উপন্যাসও লিখেছে জনপ্রিয় এক সাপ্তাহিকে, তবে বই হয়ে বেরোয়নি। লেখালেখির ভূতটা মাথায় গেঁড়ে বসতেই ছাত্রাবস্থায় পাওয়া চাকরিটা ছেড়ে দেয়, শুরু করে সাংবাদিকতা। তারপর ‘বাউণ্ডুলে’ নামে কলাম লেখা। মাঝে মাঝে অবশ্য খেদ ঝাড়ে নিজের ওপরেই সাংবাদিকের মাঝে লেখক সুমন্ত বুঝি হারিয়ে যাচ্ছে! আমরা সান্ত্বনাবাণী শোনাই না, উল্টো বকে দেই । হারাতে চাই না যে! এই, এই তো আমাদের সুমন্ত আসলাম, ৫ ফুট সাড়ে ১১ ইঞ্চি। দুপুরে ভাতের বদলে ফ্রেঞ্চফ্রাই পছন্দ, রাতের বেলা পুরোপুরি উপোস। স্বাস্থ্যবান শরীরে চেহারাটা মাশাল্লা! একটু জোর দিয়ে চেষ্টা করলে চিত্রজগতের হিরো হওয়াটা বিচিত্র ছিল না। তা থাক বাবা । তুই লেখক হ, লেগে থাক । কিঞ্চিত গোয়ার্তুমি ছাড়া তোর সিদ্ধিলাভের পথে কোনো অন্তরায় দেখছি না। শুধু ইমোশনটা একটু কন্ট্রোলে রাখিস। পনের বছর আগে সুমন্তর প্রথম বইয়ে আমরা এটা লিখেছিলাম। পনের বছর পর দেখি সব আগের মতোই আছে। বয়স বেড়েছে খানিকটা কিন্তু সেই আগের মতোই শিশুমনা, সারলিক। আমাদের মুগ্ধ হওয়া আর শেষ হয় না। —কাছের বন্ধুরা।
বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।