জীবনের বিচিত্র গল্পে নানা আলামত থাকে। কেউ সেসব আলামতের পেছনে ছোটে, কেউবা দূরে থাকতে চায়। সবসময় কি তা সম্ভব হয়? এমন একটা জিজ্ঞাসা রেখে সময় ও জীবনকে ধারণ করা ১৪টি ভিন্ন স্বাদের গল্প নিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭ তে প্রকাশিত হয়েছে সোহেল নওরোজের তৃতীয় গল্পগ্রন্থ ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’। টিভি-সিরিয়াল ও ইন্টারনেট-ফেসবুকের আসক্তিদিনেও অফুরান তৃপ্তি দিয়ে পাঠককে গল্পপ্রেমী করে তোলার মতো বইটিতে যাপিত জীবনের নানামুখী চিত্র তুলে আনা হয়েছে। গল্পকার সোহেল নওরোজ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন পরিচ্ছন্ন ও রুচিশীল শিল্পমননের। তিনি চিন্তাচেতনার গভীরতায় অল্পকথার গল্পের মাধ্যমে দেখিয়েছেন সাবলীল, প্রাঞ্জল ও রুচিশীলতায়ও পাঠককে বিচিত্র স্বাদ দেয়া সম্ভব।
সময়কে বাদ দিয়ে গল্প হয় না। ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’ এই সময়ের বই। চাওয়া-পাওয়া, আক্ষেপ-আকাক্সক্ষার সঙ্গে সময়কে বেঁধে লেখক গল্প সাজিয়েছেন নিজের মতো করে। যেখানে গল্পের ভাঁজে ভাঁজে এক অলৌকিক আবেশ শরীর খুলে দেয়। পাঠক সেই আবেশীয় মোহনীয়তায় লেখকের গল্পদেশে হারিয়ে যাবেন খুবই অল্প সময়ে। গল্পের ভেতরের গল্পগুলো মনে হবে খুব চেনা। টান আছে, বিস্ময় আছে, শেষ হয়েও শেষ না হওয়ার বেদনা আছে। তবে বর্ণনার আতিশয্য নেই। অতি উপমা, অলঙ্কারের মাখামাখি নেই। লেখক শুধু নিজের গল্পটাই বলতে চেয়েছেন। তাই ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’ পড়ে কেউ গল্প ছাড়া অন্য কিছুর আলামত পাবেন না।
সোহেল নওরোজ এ প্রজন্মের লেখক। রচনার অজস্রতায়, বিষয়ের বৈচিত্রে তার নামটি পাঠকমহলে সুপরিচিত। যথার্থ ভাব প্রকাশে নিজস্ব আঙ্গিক ব্যবহার ও উপযুক্ত শব্দ চয়নের পারঙ্গমতা স্পষ্ট। মূলত গল্পকার হলেও সমসাময়িক বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কলাম ও মতামত প্রকাশে চৌকস। তবে তিনি যা-ই লিখুন, গতানুগতিকতা এড়িয়ে নিজের স্বকীয়তা তুলে সফল প্রচেষ্টায় তিনি স্বতন্ত্র।
ঝিনাইদহের বেতাই গ্রামে নানাবাড়িতে সোহেল নওরোজের জন্ম। বাবার ডায়েরি অনুযায়ী ১ অক্টোবর। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাৎস্যবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। ‘সুন্দরবন ঊপকূলীয় মৎস্যজীবীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ বিষয়ক গবেষণাগ্রন্থ জার্মানির ল্যাম্বার্ট থেকে প্রকাশ পায়। বিসিএস (সমবায়) ক্যাডারে ইস্তফা দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আগ্রহ জন্মে প্রকৃতি, পরিবেশ আর জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়ে। লেখকের মতে, মনের খেয়ালে নিজের মতো করে বলতে পারায় যে আনন্দ, তার তুলনা নেই। আরোপিত নয় বরং সানন্দে লিখেই গল্পের কাছাকাছি যাওয়া যায়। সে থেকেই মূলত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকে লেখালেখির শুরু। মূল আগ্রহ গল্পে; তবে প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও রম্য লিখতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়। সোহেল নওরোজ বাংলা একাডেমি আয়োজিত তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ প্রকল্প-এর পঞ্চম ব্যাচের সদস্য। ২০১৩ সালে অধিকোষ সাহিত্য প্রতিযোগিতায় তার ‘নিয়তি কিংবা আগুনে পোড়া স্বপ্ন’ সেরা গল্প নির্বাচিত হয়।