"পুঁজিবাদের দুঃশাসন" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ পৃথিবীব্যাপী এখন প্রবণতা হলাে শাসনের পক্ষে দুঃশাসনে পরিণত হওয়ার। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি, ঘটবার উপায়ও নেই, কেননা বাংলাদেশও ওই বিশ্বব্যবস্থারই অংশ। বাংলাদেশ প্রান্তেই রয়েছে, কিন্তু কেন্দ্র থেকে সে বিচ্ছিন্ন নয়। দুঃশাসনের ওই কথাটিই এ বইয়ের প্রবন্ধগুলােতে বলা হয়েছে। সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনার এতে উল্লেখ আছে, কিন্তু সকল ঘটনাই একটি মূল ঘটনার কথা বলে, সেটি হলাে সভ্যতার অগ্রগতি হচ্ছে, কিন্তু মানুষের নিরাপত্তা বাড়ছে না। সুখ আসছে না। উল্টো নানা ধরনের অসুখবিসুখ দেখা দিয়েছে। তবে সকল রােগের কেন্দ্রে রয়েছে একটি রােগ, সেটি হলাে পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্য। পুঁজিবাদ এখন তার চুড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করেছে। সে এখন পুরােপুরি ফ্যাসিবাদী। তার দুঃশাসনে সভ্যতা এখন বিপন্ন। পাশাপাশি প্রতিরােধও চলছে। সে প্রতিরােধের লক্ষ্য মানুষের। সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে মানবিক করা, পুঁজিবাদকে 'হটিয়ে সমাজতন্ত্রের জন্য পথ পরিষ্কার করা। এই কথাগুলােই বইতে বলা হয়েছে। উপস্থাপনাটা সহজ কিন্তু বিষয়টা জরুরী। এবং গভীর। এখানে ভাববার বিষয় আছে। তবে সুরটা মােটেই হতাশাবাদী নয়। প্রতিরােধ যে জয়ী হবে এ বিষয় লেখকের কোনাে সন্দেহ নেই।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম. ১৯৩৬) পেশায় সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অঙ্গীকারে লেখক। এই দুই সত্তার ভেতর হয়তো একটা দ্বন্দ্বও রয়েছে, তবে সেটা অবৈরী, মোটেই বৈরী স্বভাবের নয়। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, অবসরগ্রহণের পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রফেসর এমেরিটাস হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা এবং ইংল্যান্ডের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখার কাজের পাশাপাশি তিনি ‘নতুন দিগন্ত’ নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তার গ্ৰন্থসংখ্যা আশির কাছাকাছি। তার অকালপ্রয়াত স্ত্রী ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরীও লিখতেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।