"জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ঝট করে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম । ছেলেটাকে ভড়কে দেব, কঠিন কঠিন কিছু কথা বলব তাকে, ‘চমকানাের প্রহর কেটে গেছে সেই অনেক আগেই, যেদিন বুঝলাম – নগ্ন আর ক্ষুধার্ত হয়েই জন্মেছি আমরা, কিন্তু এই নগ্নতা আর ক্ষুধা দিনদিন বেড়েই চলছে আমাদের। এসব নিয়েই বড় হচ্ছি আমরা।’ ‘চমকানাের আরাে অনেক কিছু আছে।’ আমার তত্ত্বে বাগড়া দিল সে, ‘আপনি কি জানেন আমরা কখনােই বড় হই না, আমরা শুধু শিখি কীভাবে মানুষের সামনে নিখুঁতভাবে অভিনয় করতে হয়।’ ভ্রু কুঁচকালাম আমি । কিন্তু সেটা দেখার সুযােগ দিলাম না তাকে। একটু চমকেই উঠলাম যতটুকু বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম বােকাকৃতির এই ছেলেটাকে, তার চেয়ে বেশিই সে। সম্ভবত আরাে বেশি। একটু ধাতস্থ হলাম আমি, ‘কিন্তু অভিনয় করেই মানুষ আজকাল বড় হচ্ছে, প্রতিনিয়ত এই অভিনয়কে অনুশীলন করছে।’ পলিথিন থেকে আরেকটা পেয়ারার টুকরাে তুলে নিলাম হাতে, ‘জানেন তাে, অনুশীলন মানুষকে নিখুঁত করে।’ ‘কিন্তু কোনাে মানুষই নিখুঁত নয়।', পা থামালাম আমি। কৌশলী প্রত্যুত্তরে মুচকি হাসলাম । কিন্তু ব্যক্তিত্বের ধার না কমিয়ে সরাসরি তার দিকে তাকালাম, ‘কোনাে মানুষই নিখুঁত নয়, এটা বিশ্বাস করেন আপনি? ‘নিজেকে আমি বুদ্ধিমান মনে করি না, সুখী মনে করতে চাই । যারা সন্দেহ প্রকাশ করে তারা বুদ্ধিমান, আর যারা বিশ্বাস করে তারা সুখী।’ মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি আমি, মুগ্ধতা আঁকড়ে ধরছে আমাকে। ডান দিকে বাঁক নেয়া রাস্তাটা পেরুতেই পরস্পরের গা স্পর্শ হতে যাচ্ছিল, ছেলেটা থমকে দাড়াল। অনাহুত স্পর্শ এড়িয়ে আমি এগিয়ে গেলাম । মুগ্ধতা আরাে বেড়ে গেল আমার । উদ্দেশ্য প্রণােদিত ছুঁতে যাওয়া প্রচলিত কোনাে ছেলের উপকরণ তার মাঝে খুঁজে না পেয়ে মনটা ভরে উঠল । কণ্ঠে উচ্ছ্বাস তার, বিশ্বাস ব্যাপারটাই আসলে অন্যরকম। যদি আপনি বলেন, আকাশে দশ হাজার কোটি তারা আছে, সবাই বিশ্বাস করবে তা । কিন্তু সদ্য রং করা কোনাে জিনিস দেখিয়ে যদি বলেন, রংটা এখনও কাচা আছে, অবিশ্বাস করে সঙ্গে সঙ্গে সবাই সেটা ছুঁয়ে দেখবে।
বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।