আশির যখন জাপানে পড়তে গিয়েছিল ও তখন ছাত্র। পুরো আলাদা একটা সংস্কৃতিক থেকে সেখানে গিয়ে সে দেশের নানা কিছু দেথে ও স্বাভাবিকভাবেই অবাক হয়েছে। বিচিত্র বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত ঢঙে লেখা এই বইয়ের ছোট ছোট রচনাগুলো ওর সেই অবাক হওয়ার গল্প।
জাপানি জীবনের নানা ব্যাপার দেখে ও একাই শুধু অবাক হয়েছে তা নয়, ওর স্বাদু চিত্তাকর্ষক আর আমেজি লেখার মৌতাতে পাঠক হিসেবে আমরাও যেমন কিছুটা অবাক হয়েছি। লেখাগুলো ছোট মজাদার বুদ্ধিদীপ্ত ও গতিশীল। বিচিত্র তথ্যে ভরা। লেখার এই প্রসাদগুণ দিয়ে আশির ছোট ছো বেশকিছু মানবিক গল্পের পাশাপাশি জাপানি জীবনের নানা পরিচয়- ওখানকার মানুষের আত্মহত্যা, তাদের ভূতে বিশ্বাস, ফিউনারালের পরিপাটি ব্যবস্থা, শ্মশান, কাস্ট সমস্যা, কুসংস্কার, সামাজিক শিক্ষা, ভাষা, মিডিয়া- এমনি হরেক বিষয়কে রমণীয় করে তুলেছে।
দেশটিকে ও টুরিস্টদের মতো বাইরে থেকে দেথেনি- দেখেছে একজন বিদেশি হিসেবে যে বহুদিন সে দেশে থাকতে থাকতে নানা বাস্তব ও মানবিক অভিজ্ঞতায় ভরে উঠেছে। এ বই তারই উষ্ণ সজীব বিবরণ। এজন্যে বইটিতে জাপানের অন্তর্জীবনের খবর মেলে।
বছর আট-দশ আগে জাপানে বেড়াতে গিয়ে আমি ওদেশের ওপর একটা ভালো বই নিয়ে এসেছিলাম। কিন্ত বইটি পড়ে জাপানকে যেন জেনেছি তার চেয়ে বেশি। এর কারণ এ গল্প জাপানের একেবারে ভেতরের গল্প। লেখকের ব্যক্তিগত রসবোধ, চাউনি, বর্ণনাভঙ্গি একে প্রাণবন্ত করেছে।
বইটি আমাকে জাপানের বাসিন্দা করে তুলেছে। পড়ার সময় মনে হয়েছে সব পাঠকেরই হয়তো তাই মনে হবে।
জাপান কাহিনী - ৩য় খণ্ড’ বইটির সামারীঃ জাপানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আমাদের মাতৃভাষা দিবস যেমন আন্তরর্জাতিক স্বীকৃতীপ্রাপ্ত, জাপানের কজনেইবা জানে তা জানার দায়িত্ব কার লেখক প্রশ্ন করেছেন?প্রবাসী বাঙ্গালীর নাকি জাপানী দূতাবাসের। জাপানীরা মাতৃভাষা দিবসের কি উদযাপন করে বা ওদরে মাতৃভাষা দিবস কি? নিশ্চই জানার বিষয় ইত্যাদি। আরো আলোচনা করা হয়েছে…আমার জাপানি ভাষার শিক্ষক, জাপানের একান্নবর্তী পরিবার, এ কেমন কান্না, দাবি চাওয়া দাবি পাওয়া, জাপানের নাগরিক ক্ষমতা, জাপান কেন এত পরিষ্কার, ভর্তি পরীক্ষার হল, জাদু দেখিয়ে দেড় মিলিয়ন ইয়েন, টয়োটা-তয়োতা, জাপানের ই-কমার্স, টেকনোলজি বাই দ্য পিপল ফর দ্য পিপল, জাপানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, জাপানে দুর্ঘটনার দায় ভার, হাই স্পিড লিফট, ইমেজ, বিদেশে প্রিয়জনের মৃত্যু সংবাদ, জাপানি প্রেমিকার ভালোবাসার জোর, জাপানে সন্ত্রাস-সন্ত্রাসী, আসলে জাপান কী কারণে এতো উন্নত মনোভাব, নাকি পরিশ্রম বা তারা সময় সচেতন, নিয়মানুবর্তুতা বিদ্যমান, তার সমাধান বইটি পড়লে পাওয়া যাবে।
আশির আহমেদ জাপানের কিয়ুশু। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক । গবেষণা করছেন তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে । গবেষণাগার খুলেছেন বাংলাদেশে। সামাজিক সমস্যা সমাধানের গবেষণাগার গ্রামীণ কমিউনিকেসান্স এর গ্লোবাল কমিউনিকেশন সেন্টার এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। জন্ম সিলেটে হলেও শৈশব আর প্রাইমারি স্কুল কেটেছে মতলব থানার এখলাছপুর গ্রামে । তারপর কুমিল্লা জিলা স্কুল আর ঢাকা কলেজ। বুয়েটে অল্প কিছুদিন ক্লাস করার পর ১৯৮৮ সালের অক্টোবরে জাপান শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বৃত্তি নিয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট কলেজ অব টেকনোলজি গ্রুপের প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে জাপানে আসেন । জাপানের ৪৭ টি প্রিফেকচারের ৪৭টিই চষে বেড়িয়েছেন, বানিয়েছেন হাজারো জাপানি বন্ধু। দীর্ঘ ২৮ বছরের জাপানের অভিজ্ঞতা বাংলাভাষীদের জন্য লিখে যাচ্ছেন আশির-ঢঙের জাপানকাহিনি ।