নারীর অন্তস্তল, তাদের অভীপ্সা এবং সংকট-সংঘাতময় আর্দ্র জীবনচর্যা প্রাবন্ধিক মাহমুদা খাতুনের আগ্রহ অভিনিবেশের কেন্দ্রীয় বিষয়। গ্রন্থভুক্ত পাঁচটি প্রবন্ধের কেন্দ্রে রয়েছে বঙ্কিম-রবীন্দ্র-শরৎ-তারাশঙ্করের নারী রূপায়ণের রহস্য উন্মোচন ও স্বরূপ সন্ধান। সাধু ভাষারীতিতে লেখা শৈবলিনী প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বৃন্তছেঁড়া কুসুম শৈবলিনীর প্রণয়-পরিণয় ও পরিণতির এক দার্শনিক ভাষ্য যোজনা করেছেন। অতঃপর একে একে মৃণ্ময়ী-কুন্দনন্দিনী-রোহিণীকে অতিক্রম করে রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্রের নারীমণ্ডলীর সংকটাপন্ন দাম্পত্যের পরিণাম বিচারে মনোযোগী হয়েছেন। কিন্তু শেষ অবধি তাঁর অন্বেষণ এক নতুনতর আবিষ্কারে সচকিত হলো। হাঁসুলী বাঁকের উপকথা-র নসুবালা চরিত্রের শুকসারী কথা উপন্যাসে নতুন রূপে ফিরে আসা প্রসঙ্গে অভিনব ব্যাখ্যা উপস্থাপন করলেন তিনি। ‘নসুবালা’ শেষোক্ত উপন্যাসে শহরে বাসা বেঁধেছে। পরিবর্তন হয়নি তার নারী স্বভাবে। প্রাবন্ধিকের ভাষায়-‘নসুর নারী অস্তিত্বই সত্য, মাতৃরূপেই সে ঈশ্বরের কৃপা চায়।… যার নিজ জীবনবৃক্ষই রইল শুষ্ক, নিষ্পত্র,…-সেখানে জগৎ শোভার জন্য এই ‘না-পুরুষ না-রমণী’র আকুলতা হৃদয়কে এক বিষাদিত বোধে আচ্ছন্ন করে দেয়।’-তৃতীয় লিঙ্গের মনোজগতে মাতৃত্বচেতনার অস্তিত্ব আবিষ্কার বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের এক অভিনব সম্পদ।
প্রফেসর মাহমুদা খাতুন ১৯৩৮ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মরহুম শাহেদ আলী পাটোয়ারী ছিলেন পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি স্পিকার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৫৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিনি তিন সন্তানের জননী। কন্যা মাহফুজা হক এমএসএস; পুত্রদ্বয় প্রফেসর ডা. শাকিল গফুর এম. ডি. এবং প্রফেসর ড. শায়ের গফুর। তিনি ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণান্তে স্বামী ডা. এম. এ গফুরের সাথে চাঁদপুরে বসবাস করছেন। সাহিত্যের প্রিয় প্রসঙ্গ তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।।