"গল্পসংগ্রহ -১" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ সৈয়দ শামসুল হক বাংলা সাহিত্যের এক প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। তাঁকে বলা হয় সব্যসাচী লেখক। কারণ আমাদের সাহিত্যের বলতে গেলে এমন কোনাে শাখা নেই যা তাঁর প্রতিভার জাদুকরি স্পর্শে সঞ্জীবিত হয়নি, আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি বিস্ময়কর সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে তাঁর তুলনা ছিলেন একমাত্র তিনিই। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে হাতেগােনা যে-কয়েকজন লেখক আমাদের সাহিত্যে আধুনিকতার পথ নির্মাণ করেছেন সৈয়দ শামসুল হক তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। কিন্তু অন্যদের মতাে তাঁর সৃজনপ্রতিভা সাহিত্যের একটি বা দুটি শাখায় কৃতিত্ব দেখিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। কবিতা, ছােটগল্প, উপন্যাস, নাটক, স্মৃতিকথা, অনুবাদ, মােটকথা যেখানেই তিনি হাত রেখেছেন সেখানেই আশ্চর্য পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন। যােগ করেছেন নতুন নতুন মাত্রা। উন্মােচন করেছেন সৃষ্টিশীলতার নয়া দিগন্ত। বাংলাদেশের ছােটগল্পে যারা বিষয় ও প্রকরণ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ও কাজ করেছেন সৈয়দ হক নিঃসন্দেহে তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। বরাবর তিনি প্রচল ধারার বাইরে লিখেছেন। আঞ্চলিক-ভৌগােলিক প্রেক্ষাপট ও লােকজ সংলাপের কারণে দেশের মঙ্গাপীড়িত উত্তরাঞ্চলের জীবন ও জনপদ নিয়ে লেখা তাঁর গল্পগুলাে যেমন বিশ্বাসযােগ্যতা অর্জন করেছে, একইরকম জীবন্ত ও মর্মস্পর্শী হয়ে উঠেছে তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পগুলােও। কাহিনি বর্ণনায় তিনি স্বতন্ত্র ধারা প্রবর্তন করেছেন। বহুবচনে প্রেক্ষণবিন্দু ব্যবহার করে বিরতিহীন বর্ণনার শৈলীটি পরবর্তীকালে অনেকেই অনুসরণ করেছেন সৈয়দ হকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে। সম্প্রতি প্রয়াত শক্তিমান। এ লেখকের সঙ্গে মাওলা ব্রাদার্সের ছিল সুদীর্ঘ আত্মীয়তার সম্পর্ক। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাওলা ব্রাদার্স নির্মাণে এ-কথাশিল্পীর ভূমিকা ও অবদান আমরা গভীর শ্রদ্ধাসহ স্মরণ করি। তিন খণ্ডে প্রকাশিত ‘গল্পসংগ্রহ' পাঠকসমাদৃত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
জন্ম : ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ প্রয়াণ : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ পুরস্কার : আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নাসরিউদ্দনি র্স্বণপদক, জেবেন্নুসা-মাহবুবউল্লাহ্ র্স্বণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, পদাবলী পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।