"কতিপয় মুখস্থ মানুষ" ফ্ল্যাপের লেখা: তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা-সংকট নিয়েই ‘কতিপয় মুখস্থ মানুষ’-এর কাহিনি গড়ে উঠেছে। রূঢ় বাস্তবতার অগ্নি ও তাপে পিচঢালা পথও গলে যায়। চলতে গিয়ে পায়ের চপ্পলসহ আটকে যায় মানুষ। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আবদুল মতিনের অবস্থাও তেমনি। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আবদুল মজিদের একমাত্র পুত্র আবদুল মতিন কাঙ্ক্ষিত সমাজ খুঁজে পায় না। যৌবনে লালিত রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে সরে আসে সে। কর্মজীবনে প্রবেশ করে তার শ্রেণি বদল ঘটে। বুক ভরা তার স্বপ্ন। বুকের গভীরে সে যে স্বপ্ন লালন করে, তা কখনাে পূরণ হয় না। সে চায় শােষণহীন একটি সমাজ। টেনশন মুক্ত একটি জীবন। ত্রাসহীন একটি সমাজ। সেটি দেখা তার কখনাে সম্ভব হয় না। চারদিকে দেখে কেবল আপােষকামিতা, নীতিহীনতা, স্বার্থপরতা, চাটুকারিতা, নির্লজ্জ দলবাজি। শােষণহীন সমাজের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। মূল্যবােধের চরম অবক্ষয়, নৃশংসতা, সহিংসতা, লােভ আর লাভের প্রতিযােগিতা। সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের ব্যক্তিজীবন বিপর্যস্ত। সংকট-সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি-মানুষের জীবনের ক্ষয় ও আত্মবিনাশ এ উপন্যাসে প্রধান হয়ে উঠেছে। বাস্তবতাকে ভুলিয়ে দেয়ার গল্প নয়, তরুণ কথাসাহিত্যিক আহমেদ মাওলা উপন্যাস লেখেন চলমান সমাজের দিকে চোখ রেখে। কারণ, তিনি মনে করেন, উপন্যাস কোনাে বিনােদনের সামগ্রী নয়। কতিপয় মুখস্থ মানুষ সমকালের ঘটনা হলেও কালােত্তর সমাজেরই কাহিনি।
আহমেদ মাওলা জন্মগ্রহণ করেন ৪ঠা মে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে। বাবা: শফিক আহমেদ, মা: শামসুন নাহার। চার ভাই চার বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। পৈতৃক নিবাস ফেনী দাগনভূঁঞা উপজেলার দেবরামপুর গ্রামে। ছোটবেলার বেশ খানিকটা সময় কেটেছে গ্রামে। কৃতী ছাত্র আহমেদ মাওলা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (১৯৯১) ও স্নাতকোত্তর (১৯৯২), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'বাংলাদেশের উপন্যাসের শৈলীবিচার' শীর্ষক গবেষণার জন্য এম.ফিল (২০০০) এবং 'চল্লিশের কবিতায় সাম্যবাদী চেতনার রূপায়ণ' শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পি.এইচ.ডি (২০০৫) ডিগ্রি লাভ করেন। লেখালেখি শুরু স্কুল জীবন থেকেই। সমকালীন পত্র- পত্রিকায় তাঁর অনেক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। স্বচ্ছ গদ্যভঙ্গি ও চারুতায় দীপ্ত তাঁর লেখা ইতোমধ্যে সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থ-মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য (১৯৯৩), ইমদাদুল হক মিলনের কথাসাহিত্য (১৯৯৩), বাংলাদেশের কথাসাহিত্য: প্রবণতাসমূহ (১৯৯৭), নজরুলের কথাসাহিত্য মনোলোক ও শিল্পরূপ (১৯৯৭), বাংলাদেশের উপন্যাসের সমাজতত্ত্ব (২০০৪), রফিক আজাদ: কবি ও কবিতা (২০০৭), একুশের চেতনা ও বাংলাদেশের সাহিত্যের রূপ রূপান্তর (২০১৪), রবীন্দ্রনাথ: উপন্যাসের মানুষগুলো (২০১৩), মাধ্যমিক বাংলা সহপাঠ (সংকলন ও সম্পাদনা, (২০০৭), বাংলাদেশের উপন্যাসের শৈলীবিচার (২০০৯), মাধ্যমিক বাংলা রচনা সম্ভার (যৌথ) (২০০৯) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বি.সি.এস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিভিন্ন কলেজে কাজ করেছেন। ২০১২ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। স্ত্রী আয়েশা আক্তার স্বপ্না এবং দুই কন্যা নেভরা আহমেদ নির্বাচিতা ও ফাল্গুনী আহমেদ দীপিকা।