"মণিপুরী মঞ্জুষা" ফ্ল্যাপে লেখা কথা: নিজস্ব জীবন ও সংস্কৃতির এক বর্ণময় ঐতিহ্য নিয়ে বেঁচে থাকা, সাধারণভাবে ‘আদিবাসী' নামে পরিচিত, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলাে নানা কারণে সবসময়ই উপেক্ষিত থেকেছে। ফলে, তাদের যাপিত জীবন বা ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতির বর্ণবৈচিত্র্য কখনাে তেমনভাবে সাধারণ লােকসমক্ষে উঠে আসেনি; বরং উপেক্ষা আর বঞ্চনার কুয়াশাচাদরে ঢেকে চিরকালই অন্তরালবর্তী হয়ে রয়ে গেছে। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের এরকম একটি জাতিসত্তা হলাে মণিপুরী জনগােষ্ঠী। আধুনিক শিক্ষা ও সভ্যতার আলােয় উদ্ভাসিত হওয়ার পরও ব্যক্তি ও সমাজ-চারিত্রে বিদ্যমান একধরনের অন্তর্মুখিনতা বা রক্ষণশীলতা এদের যাপিত জীবনকে অবগুণ্ঠিত করে রেখেছে এক রহস্যময়তার কুয়াশাচাদরে। ফলে, দীর্ঘকাল পাশাপশি থেকেও মণিপুরীরা এদেশের বৃহত্তর জনগােষ্ঠীর কাছে আজও এক ‘অপরিচিত প্রতিবেশী’। এই অপরিচয়ের আড়ালই মণিপুরীদের প্রকৃত অবয়বকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে এক বিড়ম্বিত বিভ্রান্তির কুটিকায়। এ-গ্রন্থভুক্ত রচনাগুলাের অধিকাংশই উল্লিখিত এ-বিভ্রান্তির কুয়াশাজাল ছিড়ে সত্যসূর্যের তিমিরবিনাশী প্রখর দীপ্তিকে আহ্বান জানানাের লক্ষেই রচিত। মণিপুরী জনগােষ্ঠী সম্পর্কে যারা জানতে চান বা এ-ব্যাপারে যাদের সামান্যতম আগ্রহ আছে বইটি তাদের প্রয়ােজন মেটাবে এবং অনেককে এই জনগােষ্ঠী সম্পর্কে অধিকতর অভিনিবেশী গবেষণা-কর্মে উদ্বুদ্ধ করবে।
এ কে শেরাম জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি (জন্মকোষ্ঠী অনুযায়ী) হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলাধীন ১নং গাজিপুর ইউনিয়নের অন্তগত অন্তর্গত গোবরখোলা গো গ্রামে। পিতা-নবকিশোর সিংহ ও মাতা- থাম্বাল দেবী। বর্তমানে ৩৫/বি কলকাকলী, লালাদিঘির পূর্বপার, সিলেট-৩১০০-এর স্থায়ী বাসিন্দা। বাণিজ্য ও আইনে স্নাতক ডিগ্রিধারী এ কে শেরাম সোনালী ব্যাংক লিমিটেড-এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। মণিপুরী ও বাংলা ভাষায় লেখালেখি করেন। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৩টি। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে ছয়টি এবং আসাম রাজ্য থেকে দুইটিসহ মোট চৌদ্দটি অ্যাওয়ার্ড ও সম্মাননা পেয়েছেন।