ইমন চৌধুরীর রম্যগল্প শুধু হাসির যোগান দেয় না, এর মধ্য আছে অনেক ম্যাসেজ। তিনি তার লেখার মধ্যে দেশ, সমাজ, রাজনীতি আর মানুষের অমানুষ্যত্বকে খুব সূক্ষ্ণভাবে তুলে ধরেন। মেধাবী পাঠক মাত্রই তা অনুধাবন করতে পারবেন। এবং একই সাথে তার একজন একনিষ্ঠ পাঠক হবার প্রতিজ্ঞা নিবেন। ‘নিজ দায়িত্বে হাসুন’ বইটি একটি তার সেরা বই বলা চলে। অ্যান্থনি বারগেস এর একটি বাণী রয়েছে এ বইটিতে। সে বাণীটি হল- ‘আপনি হাসলে পুরো পৃথিবীই আপনার সঙ্গে হাসবে। আপনি নাক ডাকলে আপনাকে একাই ঘুমাতে হবে।’ এ কথাটির তৎপর্য খুবই গভীর ও ব্যঞ্জনাময়। আমাদের চারপাশে এতো মৃত্যু, জ্বরা, ভয়, হানাহানি, রোগ-শোক, অভাব-অভিযোগ যে আমরা হাসতে ভুলে গেছি! আমরা প্রাণ খুলে হাসতে পারি না। এজন্য হাসি নিয়ে একটি দিবসও পর্যন্ত চালু রয়েছে। কারণ মানুষ তার প্রাণ ধারণের জন্য, একটু আনন্দ লাভের জন্য হাসতে চায়। এ বইটিতে সূচিবদ্ধ গল্পগুলোর একটি প্রধান চরিত্র নিলু ভাই। নিলু ভাইকে নিয়ে ইমন চৌধুরীর পাঠকমাত্রই কৌতুহলের অন্ত নেই। বইটির শুরুতেই তাই নিলু ভাইকে নিয়ে ইমন চৌধুরী লিখেছেনÑ‘হঠাৎ মনে এলো এই একটা চরিত্র নিয়ে নিয়মিত লিখলে কেমন হয়? এমন ভাবনা থেকে নিলু ভাইকে নিয়ে পরপর বেশ কয়েকটি গল্প লিখে ফেললাম।’ বইটিতে ছোট বড় মিলিয়ে ২৪টি গল্প রয়েছে। যেমন- লাল গোলাপ সেবা সংঘ, শান্তি সফর, এনপিএল-এর নিলামে, সচেতন নিলু ভাইয়ের অচেতন কাণ্ড কালো বিড়ালের খোঁজে ইত্যাদি। নতুন নতুন আইডিয়ার রাজা নিলু ভাই। আর এ সব আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঘটে নানা সব মজার ঘটনা। ঘটনা অঘটনা যাই ঘটুক তার মধ্যে থাকে চরম হাসি। ছোট ছোট সংলাপ আর নাতিদীর্ঘ গল্পের কাঠামো তৈরি করে ইমন চৌধুরী তার লেখার মুন্সিয়ানা দিয়ে পাঠককে জয় করে নিতে পারেন অবলীলায়।
শূন্য দশকের একজন উল্লেখযোগ্য লেখক ইমন চৌধুরী। এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। জন্ম ১৮ জুন। নোয়াখালীর মাইজদী সরকারি কলোনিতে। পিতা মফিজুর রহমান চৌধুরী’র সরকারি চাকরির সুবাদে শৈশবের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে এখানে। মা দেলোয়ারা বেগম গৃহিনী। পৈতৃক বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার পৈথারা গ্রামে। ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ফেনী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রথম আলো পত্রিকার এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় সাপ্তাহিক রম্য ও বিদ্রুপ ম্যাগাজিন ‘আলপিন’-এর মাধ্যমে প্রথম হাজির হয়েছিলেন পাঠকের সামনে। এরপর ইত্তেফাক, সমকাল, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব সংবাদপত্রেই নিয়মিত লিখেছেন। লিখছেন এখনও। সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে রম্য ও বিদ্রুপ লিখে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও ইমন চৌধুরী জীবনঘনিষ্ঠ গল্প-উপন্যাস লিখতেই বিশেষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। প্রথম প্রকাশিত বই ‘লাল পাড় সাদা শাড়ি’। প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘মেঘের কাছে রোদের কাছে’। উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে ‘পাশের মানুষ’, ‘পায়ে তার কাচের নূপুর’, ‘এই বসন্তে এসো’, ‘রোদ পড়েছে ডানায়’, ‘ডেকে যায় ফাল্গুনের রোদ’, ‘অন্তহীন’ অন্যতম। লেখালেখির সূত্রেই পেশাগত জীবনে বেছে নিয়েছেন সাংবাদিকতা। বর্তমানে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় জৈষ্ঠ সহ-সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। জীবন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। রোগ, শোক, মহামারী, অনিশ্চয়তার এই মানব জীবনে মহাকালের কাছে কিছু গল্প জমা রেখে যেতে চান কেবল।