"মহিমান্বিত নকশা (দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন)" বইয়ের পিছনের কভারের লেখা: কখন এবং কেমন করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শুরু। কেনইবা আমরা এখানে? পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার সঠিক ধরণটি আসলে কেমন? দৃশ্যমান যে মহিমান্বিত নকশা’ তা কী অলৌকিক কিছর উপর নির্ভরশীল নাকি রয়েছে এর অন্য কোনাে ব্যাখ্যা? বইটিতে স্টিফেন হকিং ও লিওনার্ডো স্লোডিনাে একটি সহজ ও বােধগম্য ভাষায় তুলে এনেছেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বিষয়ে সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তার ফসল। কোয়ন্টাম তত্ত্ব অনুসারে দৃশ্যমান মহাবিশ্ব বা মহাজগত একটি মাত্র সাধারণ ইতিহাস থেকে উৎসারিত নয়। লেখকদ্বয় ব্যখ্যা করেছেন যে আমরা বা আমাদের বর্তমান অস্তিত্ব আসলে প্রাথমিক মহাবিশ্বের কোয়ান্টাম বিচ্যুতির ফলাফল এবং দেখিয়েছেন কীভাবে কোয়ান্টাম তত্ত সমর্থন করে বহুবিশ্ব’ ধারণাটি এটি একটি কল্পচিত্র যেখানে বলা হয় আমাদের এই বিশ্বটি শূণ্য থেকে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে সৃষ্টি হওয়া অসংখ্য ভিন্ন ভিন্ন নিজেস্ব প্রাকৃতিক নিয়ম বিশিষ্ট বিশ্বসমূহের একটি। তারা সমাপ্তি টেনেছেন প্রাকৃতিক ঘটনা নিয়ন্ত্রণকারী নিয়সমূহ ব্যাখ্যায় সমন্বিত তত্ত্ব বা একীভূত তত্ত্ব গঠনের একমাত্র দৃশ্যমান দাবিদার এম-থিউরির চিত্তাকর্ষক মূল্যায়নের মাধ্যমে; আইনস্টাইন যে একীভূত তত্ত্বের খোঁজে নিয়ােজিত ছিলেন, মানব অস্তিত্বের চূড়ান্ত সাফল্য অর্জিত হবে তা খুঁজে পাওয়ার মধ্য দিয়ে।
সূচিপত্র * অস্তিত্বরহস্য * সূত্রের নিয়মনীতি * বাস্তবতা কী? * বিকল্প ইতিহাসসমূহ * সার্বিক তত্ত্ব * আমাদের মহাবিশ্ব নির্বাচন * প্রতীমান অলৌকিকতা * গ্র্যান্ড ডিজাইন বা মহিমান্বিত নকশা
স্টিফেন উইলিয়াম হকিং একাধারে একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী, মহাবিশ্ববিজ্ঞানী এবং লেখক। তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক মহাকাশবিদ্যা বিভাগের পরিচালক এবং অধ্যাপক ছিলেন। বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা এই মেধাবী মানুষটির নাম শোনেননি, এমন পড়াশোনা জানা মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। স্টিফেন হকিং ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত মহাকাশতত্ত্ববিদ ডেভিড সিয়ামার তত্ত্বাবধানে পিএইচডি প্রোগ্রামে যোগ দেন। গ্যালিলিওর জন্মের ঠিক তিনশ বছর পর জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানী তখন থেকেই তাঁর প্রতিভার স্ফূরণ ঘটাতে থাকেন। পিএইচডি শেষ করার আগেই মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর জীবন আচমকা থমকে দাঁড়ায়। মোটর নিউরন রোগ বা এমায়োট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস নামক এক বিরল রোগে আক্রান্ত হন হকিং। এই রোগে পেশি নাড়ানোর জন্য দায়ী নিউরনগুলোর মৃত্যু ঘটতে থাকে এবং শরীরের প্রায় সব অংশ অচল হয়ে যেতে থাকে। বাগদত্তা জেইন ওয়াইল্ড ও সুপারভাইজার সিয়ামার অনুপ্রেরণায় আশার সঞ্চার হয় তাঁর মাঝে। ঠিকমতো কলমটিও ধরতে না পারা এই বিজ্ঞানী ১৯৭৪ সালে বিজ্ঞানী রজার পেনরোজের সাথে তাঁর কালজয়ী ব্ল্যাকহোল তত্ত্ব প্রকাশ করেন, বর্তমানে যা হকিং রেডিয়েশন নামেও পরিচিত। তিনি রয়্যাল সোসাইটি অফ আর্টস এর সম্মানিত ফেলো এবং পলিটিক্যাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের আজীবন সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম’ খেতাবে ভূষিত হন। লেখক হিসেবেও হকিং বিস্ময়কর কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। স্টিফেন হকিং এর বই সমূহ পাঠক সমাজে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাঁর নিজের তত্ত্ব ও বিশ্বতত্ত্ব নিয়ে রচিত বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ দিয়ে তিনি ব্রিটিশ সানডে টাইমস এর বেস্ট সেলার তালিকায় ছিলেন টানা ২৩৭ সপ্তাহ। স্টিফেন হকিং এর রচনা সব ধরনের পাঠকদের কাছে জটিল বৈজ্ঞানিক কথাবার্তা সহজভাবে জানার পাথেয় হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানীকে ১৯৭৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপকের সম্মাননা দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে তিনি এই পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পাঠকনন্দিত স্টিফেন হকিং এর বই সমগ্র হলো ‘দ্য ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’, ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’, ‘মাই ব্রিফ হিস্ট্রি’, ‘দ্য থিওরি অফ এভরিথিং’, এবং ‘দ্য নেচার অফ স্পেস অ্যান্ড টাইম’। ২০১৪ সালে ইউনিভার্সাল পিকচার্স ‘দ্য থিওরি অফ এভরিথিং’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। এই সিনেমায় স্টিফেন হকিং এর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য এডি রেডমেইন জিতে নেন অস্কার। শারীরিকভাবে ভীষণ রকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েও হকিং তাঁর গবেষণা কার্যক্রম সাফল্যের সাথে চালিয়ে যান। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ ৭৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।