"ইলেভেন মিনিটস" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: ইলেভেন মিনিটস উপন্যাসে পাওলো কোয়েলহো ব্রাজিলের এক তরুণী পতিতার ধারাবাহিক অভিজ্ঞতা এবং যৌন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তার আত্ম-উপলব্ধির দিকে যাত্রার কথা বর্ণনা করেছেন। উপন্যাসটি মূলত মারিয়ার গল্প। মারিয়া প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন ব্রাজিলিয়ান তরুণী। প্রথম প্রেমের নিষ্কলঙ্ক প্রত্যাখ্যানে তার মন ভেঙে যায়। খুব কম বয়সেই সে ভাবতে শেখে সত্যিকারের ভালোবাসা সে কখনোই পাবেনা। তার বিশ্বাস, ভালোবাসা এমনই ভয়ানক জিনিস যা তাকে ভোগাবে...। সে কাপড়ের দোকানে বিক্রয়কর্মীর কাজ করে। বিনোদনের খোঁজে সাপ্তাহিক ছুটির দিন রাজধানী রিও ডি জেনিরো শহরে কাটায়। একবার সেখানকার কোপাকাবানা সৈকতে, এক সুইস ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়। লোকটি তাকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের এক ক্যাবারেতে ব্যালে ডান্সারের চাকরির প্রস্তাব দেয়। শুরুতে তার কাছে সবকিছু রূপকথার গল্পের মতো মনে হয়। সে বিখ্যাত ও ভাগ্যবতী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল পুরোপুরি আলাদা। কিছুদিনের জন্য সে এক নাইট ক্লাবে কাজ করে। কিন্তু খুব শীঘ্র আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। একরাতে ক্লাব ম্যানেজারের সঙ্গে উত্তপ্ত বাগ্বিতণ্ডার পর সে চাকরি ছেড়ে দেয়। পরে মডেল হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। হাতে টাকা না থাকায় এক হাজার ফ্রাঙ্কসের বিনিময়ে এক আরবের সঙ্গে রাত কাটাতে রাজি হয়ে যায়। এরপর সে একজন যৌনকর্মী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং জেনেভার কেন্দ্রস্থল, প্রমোদনগরী রুই দে বান এর এক পতিতালয়ে গিয়ে ওঠে। এভাবে মারিয়া বেশ্যাবৃত্তিতে জড়িয়ে যায়। তবে কাজটি সে খুব নির্লজ্জভাবেই করে। | সেখানে নিয়া নামের এক পতিতার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। নতুন পেশা সম্পর্কে তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়। গণিকাগৃহের মালিক মিলানের কাছ থেকে ব্যবসার সব ধরনের কলাকৌশল শেখার পর সে তার শরীর এবং মন দিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করে। ভালােবাসার সবগুলো দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও একান্তে কেবল ডায়রিতে সে নিজেকে মেলে ধরে। খুব দ্রুত পুরােদমে সফলতা আর খ্যাতি অর্জনের পর সহকর্মীরা তাকে হিংসে করতে শুরু করে। এভাবে কয়েক মাসের মাথায় মারিয়া পরিপাটি একজন পেশাদার বারবনিতা হয়ে ওঠে। যে শুধু তার খদ্দেরদের মনই শমিত করে না, বরং তাদের সঙ্গে তাদের সমস্যা নিয়ে আলাপ করে, তাদের মনও শীতল করে। অবশেষে এক সুদর্শন তরুণ চিত্রশিল্পীর দেখা পাওয়ার আগ পর্যন্ত, সব ধরনের রােমাঞ্চের পরও, যৌনতা ও ভালোবাসা তার কাছে রহস্যময়ই থেকে যায়। প্রেম সম্পর্কে তার হতাশাজনক দৃষ্টিভঙ্গি তাকে পরীক্ষার মুখোমুখি করে। ঘটনাক্রমে সে-ও ছিল তারই মতো পথভ্রষ্ট। যৌনতার পবিত্রতা আবিষ্কারের জন্য, মারিয়াকে সবার প্রথমে অবশ্যই নিজের সাথে বোঝাপড়ার একটি পথ খুঁজে নিতে হয়। নিজেকে আবিষ্কারের এই দুঃসাহসিক অভিযানে, নিজের খাতিরেই তাকে যৌনতৃপ্তির মতাে অন্ধকার পথ রেখে ভালোবাসার টানে পবিত্র যৌনতা বেছে নিতে হয়। আর এভাবে নিজস্ব অন্তর আলো অনুসন্ধান করতে গিয়ে সে তার সবকিছুকে ঝুঁকির মখোমুখি করে। তরুণ সুইস চিত্রকর রালফের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তার জগৎ পুরোপুরি উলটে যায়। রালফ তার অন্তর আলো দেখতে পায়। মারিয়া তৎক্ষণাৎ তার প্রেমে পড়ে সত্যিকারের ভালবাসার অভিজ্ঞতা লাভ করে। এবার মারিয়া তার যৌন ফ্যান্টাসি আর রালফের প্রতি সত্যিকারের ভালবাসার মাঝে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। ঘটনাক্রমে সে রালফের স্মৃতি নিয়ে জেনেভা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ সে বুঝতে পারে তাদের মাঝে যোজন দূরত্ব। তবে ফিরে যাওয়ার আগে, সে রালফের অবদমিত যৌন আগুন পুনরুদ্দীপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং তার কাছ থেকে পবিত্র যৌনতার প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। যে যৌনতা সত্যিকারের ভালবাসার সঙ্গে মিলিত হয়ে ভালবাসার মানুষকে নিজের আত্ম সমর্পণ করে। এ বইতে কোয়েলহো যৌনতার পবিত্র স্বভাব এবং রতিক্রিয়ার স্থিতিকালের বর্ণনা তুলে ধরে দুধরনের পতিতাবৃত্তির কথা বলেছেন। টাকার জন্য পতিতাবৃত্তি এবং পবিত্র পতিতাবৃত্তি। সঙ্গে সরাসরি ধর্ষ-মর্ষকামের কথাও তুলে ধরেছেন।
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।