”ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মু আবিয়া রা.” বইটির সম্পর্কে কিছু কথাঃ কয়েক বছর আগে মাওলানা সৈয়দ আবুল আ'লা মওদূদী খিলাফাত ওয়া মুকিয়াত’ নামে যে বই লিখেছেন সে সম্পর্কে ‘আল-বালাগের জন্মলগ্ন থেকেই। অজস্র চিঠি প্রতিদিন আমাদের হাতে আসছে। দেশ-বিদেশের অনেকেই এ সম্পর্কে আমাদের অবস্থান ও মতামত জানতে চাচ্ছেন। কিন্তু দুটি কারণে এ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমরা সযত্ন নীরবতা অবলম্বন করে এসেছি। প্রথমতঃ এ ধরনের বিলাসী’ আলােচনা আমাদের মােটেও পছন্দ নয়। কেননা আমরা আমাদের সীমিত সাধ্য ও কর্মশক্তি সেই সব বুনিয়াদী সমস্যার মােকাবেলায় নিয়ােজিত রাখতে চাই, যা সামগ্রিকভাবে গােটা ইসলামী উম্মাহর অস্তিত্বের জন্য আজ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। | দ্বিতীয়তঃ আলােচ্য বইয়ের যে অংশটি দেশের সর্বত্র আজ নিন্দাসমালােচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছে তা এতই নাযুক ও সংবেদনশীল যে, সে সম্পর্কে কোন রকম আলােচনার সূত্রপাত করা বর্তমান সময়সন্ধিক্ষণে কারাে জন্যই আমরা সমীচীন মনে করি না। ছাহাবা কেরামের মােবারক জামা'আত সম্পর্কে আমাদের মৌলিক বিশ্বাস এই যে, চাঁদ-সুরুজ, আসমান-যমীন তথা গােটা সৃষ্টিজগত নবী রাসূলগণের পর তাদের চেয়ে উত্তম চরিত্রের মানুষ কোন দিন দেখে নি। ন্যায় ও সত্যের এ মহান কাফেলার প্রত্যেক সদস্য এমন শিশির-শুভ্র চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, যার একটি মাত্র দৃষ্টান্তও খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় মানুষের সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে। প্রবৃত্তির সব রকম মলিনতা থেকে তাঁদের হৃদয় ছিলাে চিরমুক্ত; নূরের তাজাল্লীতে ছিলাে চিরমিগ্ধ। আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে বুলন্দ করার জিহাদে তাঁরা ছিলেন নিবেদিত এবং আসমানী নির্দেশের সামনে ছিলেন কৃতার্থ, অবনত। মানবীয় দুর্বলতাবশতঃ তাঁদের কারাে জীবনে কখনাে কোন বিচ্যুতি ঘটে থাকলেও আল্লাহ তা ক্ষমা করে তাঁদের জান্নাতী বলে ঘােষণা করেছেন।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।