কৃষ্ণপক্ষ পৌষের মধ্যরাত্রি শেষের সামান্য পূর্বাহ্নে ঘণিভূত কুয়াশাভেজা নিকষ কালো অন্ধকারে পূর্ণ আবৃত সে শীতার্ত রাত্রির গায়ে দূর দূরান্ত থেকে দৃশ্যমান যেন গ্যাস বার্নারের টিউব থেকে তীব্র বেগে বেরিয়ে আসা আগুনের একটি মিহি নীল শিখা দৃষ্টিশক্তির পাশাপাশি হৃৎপিণ্ডের রক্তেও বুঝি এক ধরনের ভীতিকে সংক্রমিত করা সহ একটি অতিমাত্রিক আকস্মিক কম্পনের সৃষ্টি করে। এর ওপর নির্জন নিঃশব্দ আঁধারের বুক চিরে শিখাটি যদি ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে তাহলে ভীতি এবং কম্পণের মাত্রাটি আরও বেড়ে যাবার সম্ভাবনাই বেশি এবং এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত কুচকুচে কালো চাদরে জড়িয়ে নিজেকে আড়াল করবার নিছক ভান ক'রে যে লোকটি দাঁড়িয়ে আছে অপরূপ হল্দে বর্ণশোভায় শোভিত হাজার হাজার সরষে ফুলে ঢেকে যাওয়া বিস্তৃত সরষে ক্ষেতের দক্ষিণ কোণে বিশাল শিরিসগাছটির নিচে- সে অচঞ্চল, নির্বিকার। ভীতি বা আতঙ্কের বিন্দুমাত্র উপলব্ধি তার অনুভূতিতে নেই। সে নির্ণিমেষ তাকিয়ে আছে সরষে ক্ষেতের আল্ বেয়ে ওর দিকেই এগিয়ে আসা ওই নীল আলোটির দিকে। সে নিশ্চিতভাবে জানে আলোটি তার কাছেই আসছে। চারদিক নিস্তব্ধ। বাতাসও বইছে না। বয়ে চলা বাতাসের স্পর্শবিহীনতায় শিরিস পাতার ছন্দায়িত মৃদুল মৃদঙ্গও বাজছে না।