"মার্কসবাদ" বইটির সম্পর্কে কিছু কথাঃ মার্কসই প্রথম প্লেটোর মানববাদকে স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ করে তােলেন। মানুষই যে সমাজের মূল এবং সমাজব্যবস্থার এবং সভ্যতার মাপকাঠিপ্লেটোর এই দার্শনিক পর্যালােচনা হলাে মার্কস দর্শনের মূল ভিত্তি। তাই প্রত্যেকটি মানুষের সর্বাঙ্গীন মুক্তি ও উন্নতির এক বিরাট অস্ত্র-মার্কস দর্শন। জগতকে চিরপরিবর্তনশীল হিসেবে গণ্য করে মার্কস বলেন যে, পৃথিবীতে কিছুই চিরস্থির নয়। পরিবর্তনই বিশ্বজগতের প্রকৃতি; কিন্তু এই পরিবর্তন সাধনে মানুষেরই পুরাে দায়িত্ব এবং কারুকার্যতা আছে। তাই মানুষ নিজেই যেমন সমাজকে আদিম অবস্থা থেকে আজকের এই সভ্যতার উন্নততর অবস্থায় নিয়ে এসেছে আজও মানুষই তেমনি জগতকে এবং সমাজকে এই অবস্থা থেকে আরাে উন্নত ও সভ্যতর অবস্থায় নিয়ে যাবে। সে ক্ষমতা মানুষের আছে; এবং মানুষ যেমন জগতকে পরিবর্তন করতে সক্ষম-সেই সঙ্গে সে তার নিজের ভাগ্য অর্থাৎ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকে পরিবর্তন করতেও সক্ষম। এইখানেই মার্কস দর্শনের সঙ্গে অন্যান্য দর্শনের পার্থক্য। এবং তাই মার্কসবাদ মানুষের জীবনের দর্শন। প্রতিষ্ঠিত সমাজব্যবস্থার দার্শনিক ভিত্তি যতদিন অটুট থাকবে, যে দর্শনের মূল হলাে দেশ বা জাতি বা অন্য কোনাে অলৌকিক বা অপ্রাকৃতিক সংজ্ঞা, ততদিন মানুষের মনে এ বিশ্বাস, এ সংকল্প আসবে না যে, সে নিজেই তার ভাগ্যবিধাতা এবং ইচ্ছামত সে তার জীবন এবং সঙ্গে সঙ্গে সমাজকে পরিবর্তন করতে পারে। মার্কসবাদ মানুষকে সেই দর্শনে উৎসাহী করে, অনুপ্রেরণা দেয় যা তার জীবনের দর্শন, যার সাহায্যে সে এই পরিবর্তন। আনতে পারবে। তার জন্যে প্রয়ােজন প্রচলিত দর্শনের পরিবর্তে যুক্তিবাদী চিন্তার চর্চা।
মানবেন্দ্রনাথ রায় (২১শে মার্চ, ১৮৮৭ - ২৫শে জানুয়ারি, ১৯৫৪) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। তার আসল নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। বিপ্লবী কাজ করতে গিয়ে তিনি অসংখ্য ছদ্মনাম গ্রহণ করেন। মি. মার্টিন, মানবেন্দ্রনাথ, হরি সিং, ডা. মাহমুদ , মি. হোয়াইট, মি. ব্যানার্জী ইত্যাদি। তবে এম. এন. রয় নামেই মানবেন্দ্রনাথ রায় সমধিক পরিচিতি। তিনি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। তিনি সমাজতাত্তিকদের কাছে একজন ‘র্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট’ হিসেবে পরিচিত।