সুন্দরবন। পৃথিবীতে একনামে পরিচিত। এটি যেমন বাংলাদেশের জন্য অহংকারের, তেমনি বিশ্বপ্রকৃতির জন্যও। এর বিশালত্বই হোক আর ভয়াল পরিবেশই হোক, রোমাঞ্চকর এই বনকে নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত যতটুকু গবেষণা করতে পেরেছেন তা মোটেই সার্বিক নয়, বরঞ্চ কিঞ্চিৎ বলা যায়। সুন্দরবনকে নিয়ে এখন পর্যন্ত যা কিছু তথ্য-উপাত্ত এমনকি ইতিহাস পাওয়া গেছে তা সেই ‘অন্ধবর্গের হাতি দেখা’র গল্পের সাথে তুলনা করার মতো। ফলে সুন্দরবনকে নিয়ে নানা সময়ে নানা উপায়ে নানা জনের পরিসংখ্যান, গবেষণা বা লেখাজোখার মিলের তুলনায় বৈপরীত্যই বেশি পাওয়া যায়। সুন্দরবনের সার্বিক পরিবেশ যেমন রহস্যঘেরা, এর উদ্ভিদ-প্রাণী এমনকি বিপুল জলজ ধারাও রহস্যজনক। ভেঁজা নোনা মাটি, নোনা পানির জোয়ার-ভাটা, ঝড়-জলোচ্ছ¡াসের প্রবল প্রতাপকে সঙ্গী করে গড়ে ওঠা পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বন সত্যিকার অর্থেই জীব-বৈচিত্রের এক মহান ভ‚গোল। বঙ্গোপসাগরের উপক‚লবর্তী অন্যতম। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে, অবশিষ্ট অংশ রয়েছে ভারত সীমান্তের ওপারে। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফরিদী নুমানের ক্যামেরা ও গবেষণার এই কাজটি যেমন প্রকৃতি ও ইতিহাসের, তেমনি কৌত‚হলী পাঠকদেরও আগ্রহ থাকবেই।
Foridi Numan ফরিদ নুমানের পরিচিতি চিত্রশিল্পী হিসেবে। চিত্রকলায় পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটে। ছবি আঁকা, ছবি তোলা ছাড়াও বেশকিছু তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে অতিথি নির্মাতা হয়ে কাজ করেছেন, তাছাড়া কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনের জন্য বেশকিছু সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছেন তিনি। ডিটিভি’র সংবাদ বিভাগের নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের কয়েকটি শীর্ষ মাসিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক পত্রিকা ও জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছেন স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে। সহস্রাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ শিল্পী ফরিদী নুমান লেখালেখি করেছেন শৈশবকাল থেকেই। তার লেখা ভ্রমণ বিষয়ক বই ‘মুসাফির মন’ ২০১০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। ফরিদী নুমানের পৈত্রিক নিবাস মধুমতী নদী বিধৌত গোপালগঞ্জের শুকতাইল গ্রামে। ছায়া-সুনিবিড় এই গ্রামের বন-বনান্ত আশৈশব তাকে প্রকৃতির প্রতি প্রেমের অসাধারণ বন্ধন করে দিয়েছিলো। প্রকৃতির সাথে তার সেই অটুট সংযোগ এখনো আছে। আর তাই তিনি এখনো ছুটে চলেন শৈশকের সেই ছোট্ট গ্রামের বৃহত্তম সংস্করণ বাংলাদেশের বন-নদী-পাহাড়ে। তার অবিরাম ছুটে চলঅর ফসল বর্তমান বই ‘আমাদের সুন্দরবন’। বিগত দশকেরও বেশি সময় ধরে শুধু সুন্দরবনকে দেখা বা দেখানোর নেশায় বার বার ছুটে গেছেন সেখানে। বাংলাদেশের পাখি এবং ভ্রমণ নিয়ে তার বেশকিছু লেখা ইতিমধ্যেই তাকে পাঠকের কাছে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেছে। ফরিদী নুমানের পিতা ফরিদপুর শহরের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মুনীরুয্যামান ফরিদী। মা সৈয়দা ফাতিমা মুনীর। স্ত্রী সৈয়দা নাসরিন সুলতানা। দুই পুত্র সৌরভ জামান ও শাহির জামান।