কবিতার নিপুণ তীরন্দাজ প্রতিবাদী কবি জাফর পাঠান সেই বালকবেলায় প্রকাশিত প্রথম কবিতা ‘অপশক্তি সাবধান’-এর মতো আজও অটল। তার কবিতা যেন এক তীব্র নিনাদ। প্রথম কবিতার মতো প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দোহের দহন’ (২০১৪) এবং পরপর প্রকাশিত নাবুদের নাদ (২০১৫) ও অগ্নিবাণ আমাদেরকে শাণিত করেছে প্রতিবাদের ভাষায়। সেই প্রতিবাদের ভাষা আরো দগদগে হলো ২০১৭ সালে প্রকাশিত ‘মুষ্ঠিবদ্ধ হাত’-এর মাধ্যমে। কবি তার প্রতিবাদের ‘মুষ্ঠিবদ্ধ হাত’ পাঠ করে কবির বিপ্লবী মনোভাবের অনড় অবস্থানের কথা জানা যায়। আলোচ্য কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা ‘মুষ্ঠিবদ্ধ হাত’-এ কবি বলেছেন- ‘তুমি কোথাকার কে-আমাকে করো বলতে মানা ভুলে যেতে বলো বিপ্লবী ভাষা যত আছে জানা।’ কবি ‘দিবাসত্য’ কবিতায় বলেন, ‘হতে হবে দীপ্র মানবিক’। শুধু শব্দ চয়নে নয়- আদতেই কবির মন ‘মানুষের দুরবস্থার থেকে হয়ে ওঠে জাগ্রত বিবেক।’ মানুষের অমানুষি আচরণে কবি ‘বিবেকাগ্রত’ করান। নিজেকে সামলে নিয়ে কবি প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে ওঠে তার হাত। নানা অসংগতির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেন তিনি। কাব্যভাষা সোচ্চার হয়ে হুংকার তোলেন কবি। কবি বলেন- কোনো হত্যারই নাই কোনো মাফ (পৃ. ১৩) ফেরাউনরা যেন ধরতে পারে না-ধরার হাল (পৃ. ১৬) জেগে ওঠো তারুণ্য...রুখে দাও আগ্রাসন...। (পৃ. ১৮) হাসে দুর্জনেরা আকর্ণ বিস্তীর্ণ হাসি হাসতে হাসতে সজ্জনের দেয় ফাঁসি (পৃ. ২৩) ‘নদী আইনে নিষিদ্ধ’ তবু বাঁধের দেয় ফাঁদ/ কৃত্রিম খরা আর বন্যায় নিষ্ঠুর আর্তনাদ (পৃ. ২৮) ‘মুষ্ঠিবদ্ধ হাত’ কাব্যগ্রন্থে কবি ‘সীমান্তহীন বিশ^ (পৃ. ৪২) কামনা করেন। এ জন্য তিনি আর বাংলার মসনদ হারানো স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দোলার মতো ভুল করতে চান না, যে ভুলের জাঁতাকলে খেসারত দিচ্ছে এখনো বাংলা।