"সিপাহি বিদ্রোহ এবং একটি ঐতিহাসিক অবিচার" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ একশ ষাট বছর আগে ১৮৫৭ সালে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসকের বিরুদ্ধে উপমহাদেশে দেশীয় সিপাহিরা যে বিদ্রোহ করেছিল বৃটিশ ইতিহাসবিদরা সে ঘটনাকে ‘সিপয় মিউটিনি’ বা সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবে বর্ণনা করলেও বাস্তবে পলাশী যুদ্ধের একশ বছর পর এটি ছিল উপমহাদেশে জনগােষ্ঠীর প্রথম স্বাধীনতার লড়াই। অধিকার আদায়ের রাজনৈতিক দাবির পাশাপাশি বৃটিশদের কাবু করতে গড়ে উঠতে থাকে সশস্ত্র গােপন সংগঠন। চলতে থাকে নাশকতামূলক কাজ। বৃটিশদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ‘কুইট ইন্ডিয়া', ‘স্বরাজ' ইত্যাদি নানা আন্দোলনের পর শুরু হয় পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন। বৃটিশ নিয়ণ শিথিল হতে থাকে এবং তারা একের পর এক ছাড় দিতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার আন্দোলন বেগবান হয়ে উঠে এবং বৃটিশ কর্তৃপক্ষ যুদ্ধ শেষ হলে স্বাধীনতা মেনে নিতে সম্মত হয়। সিপাহি বিদ্রোহের পর উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে সময় লেগেছিল নব্বই বছর। কিন্তু এতাে বছর পরও সিপাহি বিদ্রোহের প্রভাব রয়ে গেছে। কারণ এ বিদ্রোহের পিছনে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে খাঁটি দেশপ্রেম। সিপাহিদের বিদ্রোহ ব্যাপকভাবে সংঘটিত হয়েছিল বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশে, যা দমন করতে কয়েক মাস সময় লেগেছিল বৃটিশ কর্তৃপক্ষের। এর বাইরে অন্যান্য কয়েকটি স্থানে বিদ্রোহ ছিল ক্ষনস্থায়ী এবং সেগুলাে দমন করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। বিদ্রোহের সাথে অজানা অনেক ব্যক্তিও জড়িত ছিলেন, যাদের ভূমিকা উঠে এসেছে ‘সিপাহি বিদ্রোহ এবং একটি ঐতিহাসিক অবিচার' গ্রন্থে। শেষ মােগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে বৃটিশ কর্তৃপক্ষ তাদের পেনশনভােগী হয়ে বিদ্রোহে সায় দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করে এবং তার পূর্বপুরুষদের নির্মিত ও তাঁর আবাস দিল্লির লালকিল্লায় তাঁকে বদ্ধ কুঠুরিতে বন্দি অবস্থায় রেখে, সামরিক আদালত বসিয়ে তার বিচার করে। অশতিপর ভগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী বাহাদুর শাহ জাফরের বিরুদ্ধে হত্যাসহ চারটি অভিযােগ এনে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি হিসেবে তাঁর প্রিয় দিল্লি থেকে সড়ক ও নৌপথে প্রায় তিন হাজার মাইল দূরে তখনকার বার্মার রাজধানী রেঙ্গুনে নির্বাসিত করা হয়। হতভাগ্য এই সম্রাটের কাহিনি গ্রন্থটিকে আরাে সমৃদ্ধ করেছে। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘সিপাহি বিদ্রোহের ভুলে যাওয়া কাহিনি এবং একটি ঐতিহাসিক অবিচার নামে।’ ‘নালন্দা' প্রকাশনী এটি প্রকাশ করছে ‘সিপাহি বিদ্রোহ এবং একটি ঐতিহাসিক অবিচার' নামে।