মানুষের ভেতর বাসকরা মানুষেরা প্রতিদিন নিজের সাথে নিজের ভাবনাগুলাের আদান প্রদান চালু রেখে প্রত্যাশা করে আপন আকাক্ষার বাস্তবায়ন। মানুষেরা রাষ্ট্রের কাঠামােতে সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্বাস খুঁজে ফেরে নিজের সহজাত মৌলিক অভিলাষে মােড়ানাে পথ আর প্রশান্তি পেতে। মানুষেরাই তো বুকের কোটরে পেলেপুষে রাখা সুকোমল সিম্ফনিগুলােকে আরেকটি হৃদয়ের অভিমানের স্রোতে মেশাতে স্বপ্নাচ্ছন্ন হয়। মানুষেরা তাদের ভাবনার এ সকল খেলাতেই হয় তাে হোঁচট খায়, তখন আবারাে কর্কশ অভিজ্ঞতাগুলােকে নতুন করে রঙ মাখিয়ে প্রত্যাশার বিনুনিতে আপন জীবনের প্রাপ্তির ছায়া নির্মাণ করে। এই যে এমন করে মানুষের সাথে নিজের গহিনে বাসকরা মানুষের খেলা, এই যে মানুষের ভাবনার সাথে রাষ্ট্রের অনুরক্ত ভঙ্গির সংঘাত, সেগুলােই কথাশিল্পী মুজতবা আহমেদ মুরশেদের গল্পের উপজীব্য। জলনর্তকীর ছায়া গল্প সংকলনেও ওই রকম উপাদানে সমৃদ্ধ ঋজু ছাঁটের ছন্দময় ভাষায় লেখা এগারােটি গল্প উপস্থাপিত। এ গল্পগুলাে একেবারেই সেই সকল পাঠকের জন্যে, যারা প্রতিনিয়ত জলজ রেখাচিত্রের ওপর প্রাণের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে জীবনের গলি-উপগলির নানা মাত্রিক রঙ চিনতে তৃষ্ণার্ত।
কবি ও কথাসাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদের জন্ম ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গা মহল্লায়। চার দশকের কাছাকাছি সময় ধরে তার নিমজ্জণ গল্প, কবিতা, নাটক, ছড়া, আর গান রচনার ভুবনে। তাঁর পিতা এডভোকেট মোঃ আজিজুর রহমান, এমএনএ ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সফলতায় অন্যতম কারিগর। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক এবং মুক্তিযুদ্ধের ৭ নং সেক্টরের লেফটান্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদার সিভিল এ্যফেয়ার্স অ্যাডভাইজার। মা মোসাম্মত সমিদা একজন রাজনৈতিক এবং সমাজকর্মী। কবি ও গল্পকার মুজতবা আহমেদ মুরশেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে ঢাকাস্থ জাপান ও জার্মান দূতাবাসে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে পঁচিশ বছর কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত। সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে তিনি ২০০৫ সালে মাটি ও মানুষের সংস্কৃতিকে ধরে রাখার প্রয়োজনে তৈরি করেছেন স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র এবং বর্তমানে তিনি স্বভূমি’র সভাপতি। ভ্রমণ করবার তার প্রবল নেশায় তিনি স্বদেশ ছাড়াও ঘুরে বেড়িয়েছেন সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ইতালি, ভারত আর নেপালের বিস্তৃত জনপদ।