“সেলিম আল দীন রচনাসমগ্র-৮” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা : সেলিম আল দীনের প্রধান পরিচয় তিনি রবীন্দ্র-উত্তরকালে বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার। কিন্তু নাটক রচনার বাইরে তিনি ছিলেন বাংলা ভাষা-সাহিত্যের বিচিত্র আঙ্গিকে বিচরণকারী সাহিত্য স্রষ্টা। সেলিম আল দীন তাঁর। সাহিত্যিক জীবনে একই সঙ্গে যেমন নাটক রচনা করেছেন-তেমনি কবিতা, প্রবন্ধ, গান, উপন্যাস, উপাখ্যান, গবেষণা-অভিসন্দর্ভ, এমনকি আত্মকথন রচনায় ছিলেন সিদ্ধাহস্ত। সেলিম আল দীন রচনাসমগ্রের বিভিন্ন খণ্ডে তাঁর লেখকজীবনের মধ্য ও শেষপর্বের রচনা-নিদর্শন সংকলিত হয়েছে। অষ্টম খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত রচনাসমূহের মধ্যে রয়েছে-নাট্যকারের জীবনের একেবারে শেষ পর্বের একটি সম্পূর্ণ নাটক ‘পুত্র’ এবং দুটি অসম্পূর্ণ নাটক ‘অপরাধের দণ্ড’ ও ‘হাড়হাডিড'। এছাড়া অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের নাটকে সমকালীন জীবন’, ‘ইতিহাসের সম্মুখ রেখায় বাংলাদেশের নৃত্য ও ‘মঞ্চ নাটকে (নাট্যসাহিত্যে) নারীর উপস্থাপনা : জেন্ডার প্রেক্ষিত’ শীর্ষক তিনটি প্রবন্ধ। সংকলিত প্রবন্ধসমূহে । বাংলাদেশের নাট্য-ঐতিহ্য, নৃত্য-ঐতিহ্য ও তাতে নারীপুরুষের অবস্থান ও অংশগ্রহণ সম্পর্কে ইতিহাসচারী সেলিম আল দীনের প্রাণবন্ত আলােচনা লভ্য। সেলিম আল দীন রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ডে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযােজন হলাে- ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দীর্ঘ। সময়ের বিরতি দিয়ে এবং ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত অনেকটা অনিয়মিতভাবে লেখা সেলিম আল দীনের দিনলিপি এবং সেলিম আল দীনের কাব্য গীত রচনার পরিচয়বাহী চর্চার ফসল কিছু কবিতা/গান। জীবদ্দশায় সেলিম আল দীনের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁর রচনসমগ্রের প্রতিটি খণ্ডে রবীন্দ্র-রচনাবলী’র আদর্শে আখ্যান, নাটক, প্রবন্ধ, গান বা কবিতা সংকলন করা। হয়েছে, যাতে রচনাকারে বিচিত্রমুখী শিল্পভুবনের পরিচয় যথাযথভাবে রসজ্ঞ পাঠকেরা উপলব্ধি করতে পারেন।
জন্ম : ১৮ আগস্ট ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ। মৃত্যু : ১৪ জানুয়ারি ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন রবীন্দ্র-উত্তর কালের বাঙলা ভাষার অন্যতম নাট্যকার । তার সৃষ্টিশীলতার কিরণচ্ছটা ভারতবর্ষসহ। ইউরােপের কোনাে কোনাে অংশে বিস্তৃত হতে চলেছে। তার নাটক অনূদিত হয়েছে ইংরেজি। ভাষাসহ সুইডিশ ভাষায় এবং একাধিকবার মঞ্চস্থ হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও সিঙ্গাপুরে। বিশ্বসাহিত্যের ধ্রুপদী ধারায় শ্রমজীবী মানুষ এবং বাঙলার আবহমান কালের সংস্কৃতিকে সেলিম আল দীন তাঁর নাটকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তিদানে সমর্থ হয়েছেন। শিল্পমূল্যে তাঁর নাটক আজ বাঙলা উপন্যাস ও আধুনিক কবিতার সমপঙক্তিতে সমাসীন। বাঙলা নাট্যসাহিত্যে তিনি এক নবতর শিল্পরীতির প্রবর্তন করেছেন—দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পরীতি। সেলিম আল দীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে যােগদান করেন। পরবর্তীকালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্বের পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যায়ে নাটকের পঠনপাঠনের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি বেঁচে আছেন । মুক্তিযুদ্ধের পর নাট্য আন্দোলনের তিনি অন্যতম পুরােধা ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ফেডারেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ।