“মৃতের আত্মহত্যা " বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ‘মৃতের আত্মহত্যা' নামের গল্পটি কথাসাহি আবুল ফজল তাঁর শেষ বয়সে এসে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসনের সময় সবরকম বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করা পরিবেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে রচনা করেছিলেন । উল্লেখ্য, আবুল ফজল জিয়াউর রহমানের বার বার। অনুরােধের প্রেক্ষিতে তিনটি শর্তে, যার অন্যতমটি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জিয়াউর রহমানের সম্মতি নিয়ে তার উপদেষ্টা পরিষদে যােগ দেন । (যাগ দেবার পরপরই তিনি তার দেওয়া শর্ত বাস্তবায়নের অবস্থা সম্পর্কে সুযােগ পেলেই জিয়াকে প্রশ্ন করতেন । বেশ কিছুদিন পরও যখন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কোন অগ্রগতি দেতে পেলেন না তখন তিনি গল্পের আবরণে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার না করার প্রতিবাদ জানিয়ে এ গল্পটি লিখে ‘সমকাল' ম্যাগাজিনে প্রকাশের জন্য দেন । সমকালের সেই সংখ্যার সব কপি ছাপা সম্পন্ন হলে ভােরেই জিয়ার নির্দেশে পুলিশ ছাপাখানা থেকে বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। পরে অবশ্য ঐ ইস্যুটি গােপনে অনেক কপি হয়ে সুধী সমাজের হাতে চলে যায় । বর্তমান ‘মৃতের আত্মহত্যা’ নামের সংকলনটিতে তাঁর রচিত বঙ্গবন্ধু হত্যার ওপর আরও তিনটি ছােট গল্প প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়াও ‘মৃতের আত্মহত্যা' গল্পটিতে যে ট্র্যাজিক নাটকীয়তা রয়েছে, তাকে ভিত্তি করে আরও কল্পনা ও বাস্তবসম্মত ঘটনা ও সংলাপ সংযােজন করে এটির একটি নাট্যরূপ রচনা করেন লেখক কন্যা মমতাজ লতিফ যা এ বইয়ের পরিশিষ্টে দেওয়া হয়েছে। বইটির গল্পগুলাে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক ঘটনাকে উপজীব্য করে রচিত হওয়ায় এ সংকলনটির একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা সব সময় থেকে যাবে।
মননশীল চিন্তাবিদ, শিক্ষাব্রতী, মানবদরদি আবুল ফজলের জন্ম ১৯০৩ সালের পহেলা জুলাই। বাবা মৌলানা ফজলুর রহমান ছিলেন বিজ্ঞ আলেম। ১৯২৩ সালে নিউস্কিম মাদ্রাসা থেকে প্রবেশিকা ও ১৯২৫তে ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯২৮-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. এবং ১৯২৯-এ ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিটি পাস করেন। এগার বছর পর ১৯৪০-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. পাস করেন। স্কুল-কলেজে চাকরি করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। মুক্তবুদ্ধির চিরসজাগ প্রহরী আবুল ফজল জাতির সংকট মুহূর্তে নির্ভীক ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য ভূষিত হয়েছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার, রাষ্ট্রিয় সাহিত্য পুরস্কার ও সমকাল পুরস্কারে । ১৯৭৫-এ পেয়েছেন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি । ১৯৮৩, ৪ মে, রাত ১১টা ১৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।