"মানুচির চোখে মোগল ভারত (১৬৫৩-১৭০৮)" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: ইতালীয় পর্যটক নিকোলাও মানুচি ১৬৩৯ সালে ভেনিসে জন্মগ্রহণ করেন । কৈশাের বয়স থেকেই তিনি ছিলেন কৌতুহলি ও উদ্যমী ।। ১৬৫৬ সালে অল্প বয়সে তিনি ভারতে আসেন এবং বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পদমর্যাদায় তিনি মােগল দরবারের সাথে জড়িত ছিলেন । মােগল সম্রাট শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শাহজাদা দারা’র বিশেষ অনুরাগী হয়ে উঠেন তিনি। কিন্তু দারার ভাগ্যে বিড়ম্বনা ঘটে এবং দাক্ষিণাত্যে নিয়ােজিত শাহজাহানের কনিষ্ঠ পুত্র শাহজাদা আওরঙ্গজেব তার সাহসিকতা ও বিচক্ষণতায় তিনি দারাকে বন্দি ও হত্যা করে মােগল সম্রাট হিসেবে আবির্ভূত হন । মানুচিকে মােগল দরবারে যােগ দেয়ার জন্য আহবান সত্ত্বেও তিনি আওরঙ্গজেবের দরবারে নিজেকে যুক্ত করেননি। তিনি পরবর্তী মােগল শাসক শাহ আলম, রাজা জয় সিং ও কিরাত সিং-এর দরবারের সাথেও কাজ করেন। বেশ কিছুকাল তিনি কাটান অভিজাতদের চিকিৎসায়। মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে পড়ে কৌশলে জীবন রক্ষা করেছেন। ভারতে তার অবস্থানকালে মােগল শাসন এবং সমসাময়িক সমাজ জীবনের চিত্র ধারন করেছেন "Storia do Mogor" নামে চার খণ্ডের বিশাল গ্রন্থে। তাঁর এটি মূলত: ভ্রমণপঞ্জী হলেও গ্রন্থটিতে মােগল দরবারের খুঁটিনাটি এবং চক্রান্তের ব্যাপ্তি উঠে আসায় ইতিহাসের উপকরণ সম্বলিত বলেও বিবেচনা করা হয়। যদিও অধিকাংশ ইতিহাসবিদ ও গবেষক এটিকে বাহুল্য ও অতিরঞ্জনে ভরা অনির্ভরযােগ্য কাহিনি বলে মনে করেন । কিন্তু গ্রন্থের সুখপাঠ্যতা নিয়ে কারাে দ্বিমত নেই । মানুচি’র ভ্রমণ বৃত্তান্ত লিখিত হয়েছিল ইতালীয়, ফরাসি ও পর্তুগিজ ভাষায় এবং পর্যটক মানুচির মতােই তার পাণ্ডুলিপিও ফ্রান্স, ইতালি, হল্যান্ড ঘুরে জার্মানিতে গ্রন্থের রূপ লাভ করে । গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ করেন এম. এল আরভিন। তিনি অনুবাদ ও সম্পাদনার সময় অনেক বর্ণনা অপ্রয়ােজনীয় বিবেচনায় কাটছাট করেছেন এবং বর্ণনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ও সৌন্দর্যহানি না ঘটিয়ে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছেন। বাংলাভাষী পাঠকের মধ্যে মানুচির ‘মােগল ভারত সম্পর্কে যথেষ্ট আগ্রহ বিদ্যমান । কিন্তু ২০০২ সালের পর এটির আর কোনাে সংস্করণ প্রকাশিত হয়নি। নালন্দা পাঠকের আগ্রহে সাড়া দিয়ে গ্রন্থটি পুনঃপ্রকাশে এগিয়ে এসেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।