"সীতার বনবাস ও শর্মিষ্ঠা (নাটক)" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ ছােট বেলার কথা। আমাদের দু’পাড়া মিলে রামযাত্রার একটি দল ছিল। উত্তর পাড়া বােচাই মন্ডলের বাড়ি প্রতিদিন সন্ধ্যার পর তালিম হতাে। বােচাই মন্ডল অবস্থাপন্ন সৌখিন লােক ছিলেন। তাঁর ছয় ছেলে সকলেই রামযাত্রার প্লেয়ার ছিল। কেউ রাবণ, কেউ বিভীষণ, কেউ মেঘনাদ এ ভাবে। তালিম প্রতিদিন অল্প অল্প করে হতাে। একবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূর্ণাঙ্গ রামযাত্রা হলাে। পালাটি ছিল মেঘনাদবধ। রাজকীয় পােশাকে অদ্ভুত ভঙ্গিতে মঞ্চে আসলেন রাক্ষস রাজ রাবণ। রাবণের দম্ভোক্তি আর অট্টহাসিতে মঞ্চ কেঁপে উঠল। এরপর রণহুংকার দিয়ে মঞ্চে আসলেন রাবণের বীরপুত্র মেঘনাদ। ভয়শূন্য চিত্ত। রণে নিপুণ। বীরত্ব প্রদর্শনের জন্যই তাঁর জন্ম। মেঘনাদের বীরত্ব আর রণকৌশলে সকলেই মুগ্ধ। হঠাৎ শােকের ছায়া নেমে আসল। নিজ খুড়াে বিভীষণের ষড়যন্ত্রে লক্ষণ যজ্ঞাগারে ঢুকে প্রার্থনারত নিরস্ত্র মেঘনাদকে খড়গাঘাতে বধ করলেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়ল অকুতােভয় বীরের দেহ। সমস্ত দর্শক শ্রোতা নীরব। অনেকে দু’হাতে মুখ চেপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। ভােরবেলা দেখা গেল অনেকে কাঁদতে কাঁদতে কাপড় দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেদিন অনেকের মত আমার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিল বীর মেঘনাদ। নবম শ্রেণীর বাংলা ক্লাসে একদিন বাংলা স্যার “কপােতাক্ষ নদ” পড়াতে গিয়ে “মেঘনাদবধ” কাব্য সম্পর্কে একটু বলেছিলেন। তা থেকে মেঘনাদ সম্পর্কে উৎসুকতা আরও বেড়ে গেল। সেদিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেম বড় হয়ে “মেঘনাদবধ” পড়বমেঘনাদকে আরাে ভাল ভাবে জানব। জানার সুযােগ ও এলাে। বিশিষ্ট জীবনী লেখক ও গবেষক প্রমথনাথ বিশীর “মাইকেল রচনা সম্ভার” “হতে মেঘনাদবধ” পড়তে লাগলেম। অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা কাব্যটির ভাষা শব্দ খুবই কঠিন। ছন্দের মিল নেই। বুঝা দায়। বার বার পড়ে নিজের ভাষায় গল্পাকারে লিখতে শুরু করলেম। আমার এ লেখার উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ডক্টর নীলিমা ইব্রাহিমের “বাংলার কবি মধুসূদন” পুস্তকখানি। আমি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। “মেঘনাদবধ” পড়তে গিয়ে মাইকেল মধুসূদনের কালজয়ী নাটক “শর্মিষ্ঠা” ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের “সীতার বনবাস” পড়লেম। ভাবলেম নিজের ভাষায় গল্পাকারে এগুলাে লিখলে হয়তাে পড়ে পাঠক আনন্দ পাবেন। “মেঘনাদবধে” উদ্ধৃত শ্লোকগুলাে সরাসরি মাইকেল মধুসূদনের “মেঘনাদবধ” কাব্য হতে নেয়া হয়েছে।