“শহিদ মেজর নাজমুল হক : সেক্টর ৭-এর বিস্মৃত কমান্ডারের উপাখ্যান" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ মেজর নাজমুল হকের দূরদর্শিতা, অসীম সাহস, সাংগঠনিক নৈপুণ্য, প্রচ্ছন্ন দেশপ্রেম এবং দেশ-জাতির প্রতি কর্তব্যবােধ, আদর্শবাদিতা ছিল ব্যতিক্রমধর্মী ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সর্বোপরি মায়ের ভাষা, মাটি ও মানুষের প্রতি তাঁর ছিল গভীর। মমত্ববােধ। সেদিন পরিবার-পরিজন স্ত্রী অবােধ সন্তানদের কথা না ভেবে তিনি সব ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ব্যাপকহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে বিশাল রণাঙ্গন পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৭ নং বিশালকায় সেক্টরের মুক্তিযােদ্ধাদের ট্রেনিং, অস্ত্র, রসদ, কাপড়-চোপড়, ঔষধ ইত্যাদির যােগাড় করার পাশাপাশি গেরিলাযুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটানাে, দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে ভারতে পালিয়ে না গিয়ে অস্ত্র কাধে লাঙলের ফলাকে চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদনে মনােনিবেশ করতে পরামর্শ দিতেন। আর স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাপক জনগণকে সম্পৃক্ত করতেন তিনি। তিনি ছিলেন জনগণের এক মহান শিক্ষক ও হৃদয়ের রাজা। জনগণের প্রত্যক্ষ সমর্থন আর সহযােগিতায় স্বাধীনতা যুদ্ধ। চলাকালে তিনি দেশের অভ্যন্তরে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। এক বিশাল মুক্তাঞ্চল। জনগণই ছিল এই সাহসী যােদ্ধার আশ্রয়স্থল। সেক্টর কমান্ডার নাজমুল হকের যুদ্ধ জয়ের পরিকল্পনা, গেরিলা যুদ্ধের কৌশল, পিপলস মটিভেশন, সাংগঠনিক নৈপুণ্য ও অদম্য সাহস আর মনােবল সেদিন শুধু তাঁর সহযােদ্ধা মুক্তিযােদ্ধাদের নয়, বরং ৭ নং সেক্টরের প্রতিটি মুক্তিযােদ্ধা, কৃষককুল, প্রবাসী মুজিবনগর সরকার এবং বিদেশি সংবাদমাধ্যমকেও আকৃষ্ট করেছিল। আমরা এ উক্তির যথার্থতা খুঁজে পাই মুক্তাঞ্চলের রণাঙ্গনে প্রখ্যাত নিউজ উইক’ পত্রিকার সাংবাদিক মিলান জে. কিউবিক-এর সাথে ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে। নিউজ উইকের ৭১-এর ১০ মে সংখ্যায় একান্ত সাক্ষাৎকারে এ বাঙালি সমরনায়কের যুদ্ধ জয়ের প্রত্যয়ী দষ্টিভঙ্গিসহ জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ এবং দেশপ্রেমের চেতনায় শাণিত করতে দীর্ঘমেয়াদি জনযুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধের বিস্তৃতির কথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ২৭ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ চলাকালে কর্তব্যরত অবস্থায় মহান জাতীয় বীর সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক শাহাদাত বরণ করেন।
Title
শহিদ মেজর নাজমুল হক : সেক্টর ৭-এর বিস্মৃত কমান্ডারের উপাখ্যান