ধপ করে একটা শব্দ হয় আর বৃদ্ধ মুনাফ আলী নৌকার গলুইয়ে ভারসাম্য রাখতে না পেরে গড়িয়ে পানিতে পড়ে যায়। তখন তুমুল বৃষ্টি আর বজ্রপাতের নিনাদে প্রমত্তা হালদা গজরাচ্ছে। নৌকায় থাকা মানুষগুলো থিকথিকে জলের আস্তরণ থেকে পোনা সংগ্রহে এতটাই মত্ত যে, মুনাফ আলীর পড়ে যাওয়া খেয়ালই করতে পারে না। মুনাফ আলী শীর্ণ শরীরের সবটুকু বল প্রয়োগ করে প্রাণপণে নৌকার গলুই আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে ঠিকই, কিন্তু শেষরক্ষা হয় না। বাতাসের তীব্র ধাক্কায় নৌকা দুলে উঠলে মুনাফ আলী গলুই থেকে ছিটকে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়। নৌকায় সাকুল্যে চারজন। বাকি তিনজনের সবাই নৌকার অপর প্রান্তে হইচই করে পোনা ধরতে ব্যস্ত থাকায় এ দৃশ্য তাদের চোখ এড়িয়ে যায়। দৃশ্যের বাইরে থাকা মুনাফ আলীও পোনা ধরাকে কেন্দ্র করে উতলা হালদায় তৈরি হওয়া উত্তেজনায় মনোযোগ রেখে যৌবনের স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছিল আর ক্ষণে ক্ষণে বড় ছেলে শমসের আলী ও নৌকায় থাকা বাকি দুজনের ব্যস্ত হাতগুলোর নড়াচড়ার দিকে নজর রাখছিল। এসব করতে গিয়েই তার পা ফসকে যায়। নৌকা বাতাসে দুলছিল এবং তীব্র বৃষ্টির ছাঁটে উদোম শরীর সঁপে দিয়ে তারা চোখেমুখে এলাহি ভরসা ভাব ফুটিয়ে নৌকার ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছিল।
ফজলুল কবিরী জন্ম ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার অন্তর্গত হালদা নদীর তীরবর্তী গ্রাম উত্তর মাদার্শায়। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ততা দুই দশকের। সাহিত্যকর্মসমূহ বিভিন্ন ছোটোকাগজ, জাতীয় দৈনিক ও ওয়েবজিনে প্রকাশিত। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : ‘বারুদের মুখোশ’ (বাঙলায়ন, ২০১৫), ‘ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া গল্প’ (জেব্রাক্রসিং, ২০১৮), ‘ডোরাকাটা ক্যাডবেরি’ (জলধি, ২০২২); উপন্যাস : ‘ঔরসমঙ্গল’ (বেহুলা বাংলা, ২০১৭) এবং প্রবন্ধ : ‘লেখকের বুদ্ধিবৃত্তিক দায় ও দর্শনের খোঁজে’ (দ্বিমত, ২০২৩)।