মুক্তিযুদ্ধের কবিতা : নির্বাচিত ৯ মাসের কাব্যচিত্র। নদী, নারী ও নিসর্গ দাপানো কবি ফজল শাহাবুদ্দীনের অন্তহীনতার আরেক দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’ শীর্ষক সম্পাদিত গ্রন্থে। কবির স্মৃতি-সান্নিধ্য ধন্য কবিতাকর্মী শাহীন রেজার নিবিড় অন্বেষণের প্রগাঢ় ফসল তোলার প্রয়াসেই সম্ভব হয়েছে যোদ্ধাকবির লুকায়িত একক পরিচয় উন্মোচন। সেই পরিচয়টা কী? সেই অন্তহীন পরিচয়টি হলো- কবি ফজল শাহাবুদ্দীন আমাদেরই মহান ‘মুক্তিযুদ্ধের কবি’। কবি শাহীন রেজার মনস্ক সম্পাদনায় স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা সাহিত্যদেশ অমর একুশের গ্রন্থমেলা ২০১৭তে ‘ফজল শাহাবুদ্দীনের মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’ গ্রন্থটি কাব্যপ্রিয় পাঠক সমাজের হাতে তুলে দিয়ে একটি শুভ কাজ করেছে। সম্পাদিত কবিতাগুলোতে সুনির্দিষ্ট কোনো দশকের তকমা লেগে নেই এটাই কবির অন্তহীন কবি-শক্তিমত্তা এবং অবশ্যই বলতে হবে সম্পাদকের নির্বাচনী মুনশিয়ানার পরিচয়। তবে অবশ্যই খুব তথ্যবহুল হতো, যদি নির্বাচিত ৩৭টি কবিতা কোনো কোনো কাব্যগ্রন্থ থেকে চয়ন করা হয়েছে- তার সূত্র উল্লেখ করা যেত। কাব্যগ্রন্থ জুড়ে অনুরণিত হয়েছে পঞ্চাশের কবিতার গ্ল্যামার কবি ফজল শাহাবুদ্দীনের দেশপ্রেমিক কবি হয়ে ওঠার কাব্য-সুষমামণ্ডিত স্বদেশ-সংগীতে। কবির কাব্যনির্ভর যাপিত জীবনের যুদ্ধদিনের ব্যস্ততায় কেবল আবেগতাড়িত হয়। কারণ ‘নিজেকে এবং পরিবারকে অতিক্রম করে দেশকে ভালোবাসা সহজ কাজ নয়’। আসুন, যোদ্ধাকবির যুদ্ধদিনের কয়েকটি কাব্যচিত্রের স্মৃতিকাতর পাঠক হই। ‘কী সৌভাগ্যবান তারা সকলেই/ আমি শুধু কোথাও পারিনি যেতে/ লন্ডনে, আগরতলা কিংবা মুজিবনগরে’ (কবিতা ১, পৃ. ৭) ‘বাংলাদেশ আগুনলাগা শহর আর লক্ষ গ্রাম বাংলাদেশ দুর্গময় ক্রুদ্ধময় এক ভিয়েতনাম।’ (কবিতা-২, পৃ. ১০) ‘রাইফেলধারী, বেয়নেটধারী শেখানো/ এবার তোমার রক্ত দেবার পালা/ শাণিত তীক্ষœ সাত কোটি হাতিয়ার- বঙ্গভ‚মিতে নতুন ভিয়েতনাম।’ (কবিতা ৪, পৃ. ১২) ধর্ষিতা মায়ের লজ্জার মতো পুড়ছে মাটি (কবিতা ৬, পৃ. ১৫) ‘আমার সকল যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ জীবন যুদ্ধের বলিষ্ঠ কোরাস’ (কবিতা ২৩, পৃ. ৪০)। এ রকম অসংখ্য উচ্চারণে আমরা হয়ে উঠি ফের দেশপ্রেমিক যোদ্ধাকবি। অগ্নিঝরা মার্চ। তারপর ডিসেম্বরতক ৯ মাস আগুনের লেলিহান শিখা শেষে দেখা গেল- বৃক্ষ নেই, তবু বসে আছে শান্তির পাখি। - এ রকম ভাবনায় দগ্ধদিনের প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী রাজিব রায়। মুক্তিযুদ্ধের ওপর একক কবিতার বই এটাই প্রথম কি না সেটা গবেষণা ও তত্ত¡-তালাশের বিষয়। তবু সাধুবাদ কৃতিত্বের দাবিদার সম্পাদক শাহীন রেজা এবং প্রকাশনা সংস্থা সাহিত্যদেশ। খুব ভালো হতো...আহা! যদি এই কর্মটি কবির জীবনকালেই ঘটত। সেটি তো খুব কঠিন কিছু ছিল না। তাহলেই হয়তো অন্তহীনতার কবি ফজল শাহাবুদ্দীনকে ‘মুক্তিযুদ্ধের কবি’ হিসেবেই আগেই পেয়ে যেতাম। ঝকঝকে ছাপা, বোর্ড বাঁধাই, উন্নত অফসেটের ৬৫ পৃষ্ঠার বইটিকে মাত্র ১৩৫ টাকায় আমরা সহজেই লুফে নিয়ে কাব্যপিপাসা মিটিয়ে নিজ পাঠাগারকে সমৃদ্ধ করতে পারি। পাশাপাশি আবৃত্তিশিল্পীদের নিত্যসঙ্গী হতে পারে বইটি।