২০৭১ এক আশ্চর্য সংখ্যা। বাংলাদেশ নামের অদ্ভুত সুন্দর দেশটা যে বছর তার স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্ণ করবে। এক রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশটির ভূমিষ্ঠ হওয়াই ছিল বিশ্বের বিস্ময়। পণ্ডিতরা ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন ‘টিকবে না বাংলাদেশ। অভ্যুদয়ের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় দেশটি হারায় তার প্রতিষ্ঠাতা পিতাকে। শুরু হয় আত্মহনন এবং আত্মবিনাশের এক কালাে অধ্যায়। দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব ঘিরে ফেলে আশংকার কালাে মেঘ। কিন্তু অন্ধকারের পর যেমন ভাের হয়, শীতের পর যেমন আসে বসন্ত, তেমনি বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর বঞ্চনার উপাখ্যান ইতিহাস করে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। আর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলাে এদেশের মানুষ। যারা তিল তিল করে এদেশকে এক সম্ভাবনাময়, বিকাশমান রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। যারা তাদের জীবন উজাড় করে শস্য ফলিয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কারখানায় উৎপাদন করেছে। এদেশের জনগণই হলাে সবচেয়ে বড় সম্পদ। যাদের সম্মিলিত প্রয়াসেই বাংলাদেশ সাফল্য গাঁথা। বাংলাদেশ আরাে এগিয়ে যেতে পারত, যদি আমাদের নেতৃত্ব আরও বিচক্ষণতা এবং ধারাবাহিকতা দেখাতে পারত। তাই ২০৭১-এ বাংলাদেশ কোথায় থাকবে, তা নির্ধারিত হবে রাজনীতি দিয়েই। এই রাজনীতিরই নানা রকম উন্মােচনের প্রয়াস, এই নিবন্ধগুচ্ছ। লক্ষ্য একটাই প্রিয় মাতৃভূমির জন্য ভালােবাসা। আর আমাদের সন্তানদের জন্য এক সুখী, সুন্দর, পবিত্র মাতৃভূমি তৈরি করা।
সৈয়দ বোরহান কবীর। সাহসী গদ্যকার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। প্রচলিত অর্থে লেখক নন। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাও ছেড়েছেন কুড়ি বছরেরও অধিক সময়। তারপরও লেখালেখি তার প্রাণ। অনেক কম লেখেন। কিন্তু যা লেখেন তার মধ্যে ভাবনা থাকে। তার তীক্ষè ও ক্ষুরধার ভাবনা ব্যক্তির গণ্ডি পেরিয়ে রাষ্ট্রের চৌকাঠেও আছড়ে পড়ে। যাই লেখেন তার মধ্যে শক্তিশালী বার্তা থাকে। যে বার্তাকে প্রত্যাখ্যান করা যায়, উপেক্ষা নয়। যে বার্তা সমাজের প্রচলিত ভাবনার বদলে নতুন বাঁক তৈরি করে, নতুন পথ রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। লেখার চেয়েও বেশি যা থাকে তা হলো দর্শন, চেতনা। নিভৃতচারী নন তিনি, তবুও আলাদা, একাকী। সবার সঙ্গে থেকেও তিনি কারো সাথেই নেই। যাপন করেন একার সন্ন্যাস। নিঃসঙ্গতার মধ্যে বসবাস। একান্ত আপনভুবনের দরজা বন্ধ রাখেন। নিজের ভাবনাগুলো সযত্নে রেখে দেন হৃদয়ের সেলফে। এই লেখাগুলোই যেন তার হৃদয়ভাবনার আঁকিবুকি। সহজ কিন্তু শক্তিশালী। সোজা-সাপ্টা সত্য বলার শক্তি- এই লেখকের প্রাণ।