"বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: ভূতাত্ত্বিকদের মতে বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত নবীনভূমি হলেও এদেশের অনেক অঞ্চল বিশেষ করে লালমাটিতে গঠিত বরেন্দ্র অঞ্চলসহ আরও অনেক স্থান লক্ষ লক্ষ বছরের পুরাতন ভূমি। এসব স্থানে বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানব সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। মৌর্য যুগ তাে বটেই এর বহুপূর্বেই এখানে সভ্য মানুষের বসতি গড়ে উঠেছিল বলে পণ্ডিতদের সুচিন্তিত অভিমত। এই প্রাচীনত্ব প্রত্নপ্রস্তর অথবা নব্যপ্রস্তর যুগে টেনে নেওয়া যায় কিনা এ নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা এবং সেই সঙ্গে অনুসন্ধানও চলছে। তবে প্রত্যক্ষ ও নির্ভরযােগ্য প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত এ সম্বন্ধে সঠিকভাবে কিছুই বলা যায় না। অবশ্য একথা বেশ জোর দিয়েই বলা যায় যে, বহু প্রাচীনকাল থেকে আরম্ভ করে নিকট অতীত পর্যন্ত অসংখ্য প্রাচীন কীর্তির ধ্বংসাবশেষ বাংলাদেশে দেখা যায়। বাংলাদেশের এসব প্রাচীন কীর্তিগুলিকে হিন্দু-বৌদ্ধ যুগ ও মুসলিম আমলের কীর্তি বলে চিহ্নিত করা যায়। হিন্দু-বৌদ্ধ যুগের কীর্তিগুলির মধ্যে ছিল (ক) দুর্গনগরী (citadel), দুর্গ (fort), নগর (city) ও এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান, (খ) বৌদ্ধ বিহার ও বিহারিকা, (গ) স্তম্ভ, জাঙাল (ঘ) জলাশয় প্রভৃতি। অবশ্য এ ব্যাপারে সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয় বৌদ্ধমন্দির, বৌদ্ধ স্থূপ ও হিন্দু মন্দিরাদির কথা। মুসলিম আমলের কীর্তিগুলিকে (ক) মসজিদ-মাদরাসা (খ) মাজার ও খানকাহ (গ) মন্দির (ঘ) দুর্গ ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিভক্ত করা যায়। আলােচ্য গ্রন্থ আমার দীর্ঘদিনের আকাক্ষার প্রতিফলন। পণ্ডিত-গবেষকদের জন্য নয়, সাধারণ পাঠকদের জন্য আমি গ্রন্থটি রচনা করতে প্রয়াসী হয়েছি। তাই যুগভিত্তিক পুরার্কীতির আলােচনায় না গিয়ে নিদর্শনভিত্তিক পুরাকীর্তির আলােচনা করার চেষ্টা করেছি। এতে পাঠকদের বুঝতে সুবিধে হবে।
ড. মাযহারুল ইসলাম তরু, জন্ম ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে। পিতা : অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, মাতা : তাহেরা ইসলাম। শিক্ষাজীবন : মাধ্যমিক ১৯৮৪, নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক ১৯৮৬, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্মান ও ১৯৯৪ সালে স্নাতকোত্তর, ১৯৯৯ সালে এম.ফিল এবং ২০০২ সালে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। কর্মজীবন ১৯৯৪ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শাহ নেয়ামতুল্লাহ ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ১৯৯৯ সালে সহকারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন কর্তৃক বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারে সরাসরি সহযোগি অধ্যাপক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত। শিক্ষকতায় অবদানের জন্য তিনি ২০০৪ সালের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : নবাবগঞ্জ জেলার ইতিকথা (১৯৯০), বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাচীন কীর্তি (১৯৯৪), চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ইতিহাস ও ঐতিহ্য (১৯৯৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জের লোকসংস্কৃতি পরিচিত (১৯৯৯), প্রমিত বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা (১৯৯৯), বরেন্দ্র অঞ্চলের লোকসংগীত : আলকাপ (২০০৩), আদিবাসী লোকজীবন (২০০৭), গৌড় থেকে চাঁপাই (২০০৭) পুরস্কার : পাবলিক লাইব্রেরি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯), বাংলাদেশ কবিতা ক্লাব সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), রমেন ঘোষ স্মৃতি সম্মান (২০০২), এবং জাতীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (২০০৬), ন্যাশনাল সার্টিফিকেট, বাংলাদেশ স্কাউটস (২০০৭) লাভ।