"আপন মাহমুদ সমগ্র" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ বিকেলে আমি না-ও থাকতে পারি, নিজের ভেতর থেকে বেরিয়ে পড়তে পারি অযথাই-ঘােষণা ছাড়াই ছড়িয়ে পড়তে পারি দূরে, অতীতে...। নিজের এই কবিতার পংক্তিকে সত্যি করে আপন এখন বাদামি সময়ের দেশে হাঁটছে। ওর ইচ্ছে ছিল বটগাছ হওয়ার, উল্টোপথে হাঁটার। যে পথে কবিতা ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না, দেখা যায় না মানুষপােড়া ছাই, যেখানে বন্দুক নাই, মসজিদ-মন্দির নাই; যেখানে আদালতের চোখ মানুষের মতাে; যেখানে পথহারাকে রাজহাঁস ডেকে বলে, আসুন, একই গান সবাই গাই। সেই গানের টানে কবিতায় জীবন আঁকতে চেয়েছিল আপন, যে জীবন প্রেমের, যে জীবন স্বপ্নের, বেদনার, বিষন্নতার, ক্রোধের, যে জীবন দুঃসাহসিকতার। ওর ৩৬ বছর ৮ মাস ১২ দিনের জীবনে তিন ফর্মার একটি কাব্যগ্রন্থ, প্রায় শ'খানেক অগ্রন্থিত কবিতা আর কিছু গদ্য-এর মধ্যেই এক আশ্চর্য কাব্যশৈলীর দেখা মেলে, যার নিগূঢ় সংকেতলিপি পাঠকের চিন্তাকে চেনা জগত পেরিয়ে অন্যতর অর্থের জগতের দিকে নিয়ে যায়। ওর জীবনের মতােই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লেখাগুলাে একসঙ্গে করে এই গ্রন্থ। এরপরও হয়তাে কিছু লেখা আড়ালেই রয়ে গেল। আপনের সঙ্গে বন্ধুত্ব মানে ভিন্ন আঙ্গিক, ভিন্ন মাত্রা-একটা শার্টের ভেতর দুজনের লুকিয়ে থাকার মতাে। আমাদের কত স্বপ্ন, সাধ, দীর্ঘশ্বাস, কোলাহল, খুনসুটি, অভিমান-সবই আজ স্মৃতি। এসব কেবলই আহত করে, ক্লান্ত করে, ক্লান্ত করে দেয়। যেখানে এক-একটা আহত পাখি এক-একটা মৃত পাখির চেয়ে অনেক বেশি বেদনা বহন করে নির্মম এই সত্য উন্মােচিত করে চলে গেছে আপন, আমাদের বন্ধু, শূন্য দশকের অন্যতম প্রভাববিস্তারী কবি আপন মাহমুদ। সফেদ ফরাজী ৩১ জানুয়ারি ২০১৭