“ইতিহাস আমাকে মুক্তি দেবে" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ‘ইতিহাস আমাকে মুক্তি দেবে এই গ্রন্থটি আদতে চার ঘন্টার একটা বক্তৃতা, মােনকাদা। দুর্গ আক্রমণের অভিযােগে গ্রেফতার হয়ে ১৯৫৩ সালের ১৬ অক্টোবর আদালতের সামনে। নিজের রাজনৈতিক তৎপরতার পক্ষে যুক্তি তর্ক উপস্থাপনের উদ্দেশ্যেই এর জন্ম। কিন্তু, আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে ক্যাস্ত্রো কার্যত বিদ্যমান রাষ্ট্র-আইন-ক্ষমতাকেই জেরার মুখে ফেলেছিলেন। অসাধারণ দক্ষতায় তিনি স্বৈরাচারী বাতিস্তা সরকারের অবৈধতা এবং তার বিরুদ্ধে। বিদ্রোহের ন্যায্যতা কিউবার বাস্তব পরিস্থিতির আলােকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি তর্ক এতটাই ফলপ্রসু ছিলাে যে হামলায় অংশগ্রহণকারী | ১৯ জনসহ গ্রেফতারকৃতদের ৬৫ জনকে আদালত শেষ পর্যন্ত খালাস দেয়, ৩১ জনকে অভিযুক্ত করেও লঘু শাস্তিতেই সীমাবদ্ধ থাকে। বিদ্রোহের নেতৃত্ব হিসেবে ফিদেল ক্যাস্ত্রোসহ চার জনকে সর্বোচ্চ ১৫ বছর কারাদণ্ড ঘােষণা করে। কিন্তু রাষ্ট্র খুব বেশিদিন তাদের কয়েদ করে রাখতে পারেনি। ক্যাস্ত্রো আত্মপক্ষ সমর্থনে এই বক্তব্য উপস্থিত বক্তৃতা হিসেবে দিয়েছিলেন। পরে জেলে বসেই তিনি এর লিখিত রূপ দাঁড় করান এবং গােপনে বাইরে পাঠান। ছাপার জন্য। দ্রুততম সময়ে এই বক্তৃতা ২৫ হাজার কপি হাভানাসহ সারা কিউবায় ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাস্ত্রোর পক্ষে জনমত এত তীব্র হয়ে উঠেছিলাে যে, অচিরেই জনদাবির মুখে সরকার ক্যাস্ত্রোসহ সবাইকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এই বক্তৃতা পরিণত হয়। ক্যাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন ২৬ জুলাই আন্দোলন’-এর ইশতেহারে। এই আত্মপক্ষ সমর্থন একদিকে যেমন ছিলাে আদালতের প্রতি ক্যাস্ত্রোর জবাব, একইসাথে তা ছিলাে কিউবার জনগণের মুক্তির জন্য একটা রাজনৈতিক আহবান। রাজনৈতিক দলিল হিসেবে ইতিহাস আমাকে মুক্তি দেবে’ চিরায়ত রাজনৈতিক সাহিত্যের অংশে পরিণত হয়েছে। বাংলা ভাষায় এই অসাধারণ রাজনৈতিক দলিলটি ফিদেল ক্যাস্ত্রো, কিউবা নিয়ে আগ্রহী ও সাধারণভাবে সমাজের মানবিক রূপান্তরে সক্রিয় সকলেরই কাজে লাগবে।
জন্মঃ আগস্ট ১৩, ১৯২৬ - মৃত্যুঃ নভেম্বর ২৫, ২০১৬, যিনি ফিদেল কাস্ত্রো বা শুধুই কাস্ত্রো নামে পরিচিত; তিনি একজন কিউবান রাজনৈতিক নেতা ও সমাজতন্ত্রী বিপ্লবী। কিউবা বিপ্লবের প্রধান নেতা ফিদেল ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯ থেকে ডিসেম্বর ১৯৭৬ পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এরপর ফেব্রুয়ারি ২০০৮-এ তাঁর স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কিউবার মন্ত্রী পরিষদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালে কিউবা কমিউনিস্ট দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রধান হিসেবে ছিলেন। এর আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০০৮ সালে তিনি তাঁর দায়িত্ব ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে অর্পণ করেছিলেন। রাউল বর্তমানে কমিউনিস্ট পার্টির সহকারী প্রধান এবং মন্ত্রী পরিষদের প্রধান হিসেবে আছেন। এর আগে তিনি ১৯৫৯-২০০৮ পর্যন্ত ফিদেলের মন্ত্রী সভায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়ার সময়, ফিদেল কাস্ত্রো তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। এরপর কিউবার রাজনীতিতে একজন বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় প্রেসিডেন্ট ফালজেন্সিও বাতিস্তা এবং কিউবার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী সমালোচনা নিবন্ধ লিখে। তিনি এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। অবশেষে তিনি ১৯৫৩ সালে মনকাডা ব্যারাকে একটি ব্যর্থ আক্রমণ করেন, এবং তারপর কারারুদ্ধ হন ও পরে ছাড়া পান। এরপর তিনি বাতিস্তার সরকার উৎখাতের জন্য সংগঠিত হওয়ার জন্য মেক্সিকো যান। ফিরে এসে ১৯৫৬’র ডিসেম্বরে সরকার উৎখাতে নামেন। পরবর্তীকালে কাস্ত্রো কিউবান বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন যা যুক্তরাষ্ট্রের মদদে চলা বাতিস্তার স্বৈরশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর কিছুদিন পরই পর কাস্ত্রো কিউবার প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৬৫ সালে তিনি কিউবা কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হন এবং কিউবাকে একদলীয় সমজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে রূপ দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি রাষ্ট্র ও মন্ত্রী পরিষদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি কিউবার সর্বোচ্চ সামরিক পদ Comandante en Jefe ("Commander in Chief") এও আসীন হন। ২০১৬ সালের ২৫ই নভেম্বর এই বিপ্লবী হাভানায় মৃত্যুবরণ করেন।