না, শিক্ষা নয়, আশা এবং ভরসা উভয়ের জায়গা একটাই, সেটা হচ্ছে মানুষের সচেতনতা। আত্মসচেতনতা নয়, জগৎসচেতনতা। শিক্ষা এই জগৎসচেতনতা বিকাশে সাহায্য করে, আবার করেও না। সাহায্য এই দিক দিয়ে যে, শিক্ষা জ্ঞান দেয়, আর জ্ঞান না থাকলে মানুষ সচেতন হবে কীভাবে? কিন্তু শিক্ষা আবার মানুষকে বিচ্ছিন্নও করে, আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মূল কর্তব্য বরঞ্চ ওইটিই, ওই বিচ্ছিনতা তৈরি করা। শিক্ষা সমাজের জন্য তখনই উপকারী হয় যখন তা আত্মসচেতন করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে জগৎসচেতনও করে তোলে। যে জগৎসচেতনতার কথা বলছিলাম তার উপাদান দু’টি। একটি হচ্ছে মোহমুক্তি, অপরটি বর্তমান নারকীয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষা। দু’টি মিলেই একটি অভিন্ন সচেতনতা। এদের পরস্পরবিরোধী বলা সম্ভব, বলা যে অন্যায় তাও নয়। মোহমুক্তি হচ্ছে নেতিবাচক, অন্যদিকে আকাক্সক্ষা জিনিসটা ইতিবাচক। একটি হতাশাবাদী হলে অপরটি আশাবাদী, আপাতদৃষ্টিতে তাই এরা পরস্পরবিরোধী। কিন্তু সমাজ সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের সচেতনতার ভেতরে এরা উভয়ে আছে, এবং দুয়ে মিলে একটি এককের সৃষ্টি করেছে, হেগেলের যুক্তিবিদ্যায় যেমনটি ঘটে, যেখানে ইতি এবং নেতির দ্বন্দ্বে একটি নতুন সত্তার জন্ম হয়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম. ১৯৩৬) পেশায় সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অঙ্গীকারে লেখক। এই দুই সত্তার ভেতর হয়তো একটা দ্বন্দ্বও রয়েছে, তবে সেটা অবৈরী, মোটেই বৈরী স্বভাবের নয়। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, অবসরগ্রহণের পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রফেসর এমেরিটাস হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা এবং ইংল্যান্ডের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখার কাজের পাশাপাশি তিনি ‘নতুন দিগন্ত’ নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তার গ্ৰন্থসংখ্যা আশির কাছাকাছি। তার অকালপ্রয়াত স্ত্রী ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরীও লিখতেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।