"কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র - অখণ্ড সংস্করণ" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: বিষ্ণুপুরাণ মতে, চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন মহারাজা মহানন্দের উপপত্নী শূদ্রবংশীয় দাসী মুরা’র গর্ভজাত সন্তান এবং সেইহেতু তিনি মগধের রাজসিংহাসনের বৈধ উত্তরাধিকারী ছিলেন। কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত সুশিক্ষিত ও বিশিষ্ট বুদ্ধিশক্তির অধিকারী হওয়ায় পিতার অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন। এই কারণে তার অন্যান্য বৈমাত্রেয় ভাইদের সন্দেহ ছিল পিতা হয়তােবা চন্দ্রগুপ্তকেই রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনােনীত করে যেতে পারেন। এই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তারা তাঁর প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তাই প্রাণ রক্ষার্থে তিনি পিতার রাজ্যের বাইরে ভারতবর্ষের পশ্চিমপ্রান্তে পলায়ন করেন, এবং ভারত আক্রমণকারী আলেকজান্ডারের শিবিরে আশ্রয়গ্রহণ করেন। কিন্তু আলেকজান্ডারের ভারতদখলের দুরভিসন্ধি বুঝতে পেরে তিনি সেখান থেকে পলায়ন করেন এবং আপন গুরু আচার্য বিষ্ণুগুপ্তের শরণাপন্ন হন, এবং তার সহায়তায় ধীরে ধীরে বিশাল এক সেনাবাহিনী গড়ে তুলে নন্দবংশের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। আচার্যের বুদ্ধিকৌশল এবং চন্দ্রগুপ্তের রণদক্ষতায় শেষ পর্যন্ত নন্দবংশ ধ্বংস হয় এবং চন্দ্রগুপ্ত মগধের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন খ্রীষ্টপূর্ব ৩২২ অব্দে। চন্দ্রগুপ্তের স্বীয় গুরু আচার্য বিষ্ণুগুপ্তকে তিনি সাম্রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। আচার্য বিষ্ণুগুপ্ত অতিশয় কূটনীতিবিশারদ ছিলেন এবং তাই তিনি সম্ভবত কৌটিল্য নামেই খ্যাতিমান হন। তাঁর রচিত “অর্থশাস্ত্র” শীর্ষক গ্রন্থটি কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র নামেই বিশ্বব্যাপী সমধিক পরিচিত। ইউরােপীয় ঘরানার অর্থশাস্ত্র গড়ে উঠার বহুপূর্বে রচিত এ গ্রন্থে ভারতবর্ষের তকালীন যাবতীয় রাজনীতিক, রাষ্ট্রবৈজ্ঞানিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবরণ তিনি এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। কৌটিল্যের পূর্ববর্তী ও সমকালীন আচার্যগণের প্রণীত যেসব অর্থশাস্ত্র তখন প্রচলিত ছিল সেগুলি অবলম্বন করে এ গ্রন্থখানি রচিত হলেও এর প্রতিটি পর্যায়ে কৌটিল্যের স্বীয় সৃষ্টিশীলতার ছাপ সুস্পষ্ট।