"প্রেমেন্দ্র মিত্রের সমস্ত গল্প (ভলিউম - ২)" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ‘নিজেকেই যা নীরবে প্রচ্ছন্ন রাখে সেই সুদুর্লভ নৈপুণ্য তার রচনায়। লেখা হয়েছিল প্রেমেন্দ্র মিত্রের ছোটগল্প সম্পর্কে। মৃত্যুর মাত্র ছাব্বিশ বছর পার হয়েছে তার। অথচ সাহিত্যের যে সংরূপে তিনি প্রায় অর্ধশতক স্বমহিম ছিলেন। তার সেই ছোটগল্পই এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন হয়ে উঠেছিল ‘ছাপা নেই’ অভিধায়। চাহিদা কি নেই? না, তা বলা যাবে না। বাংলা ছোটগল্পের নানা সভায় এখনও উচ্চারিত হয় তার গল্পগুলির কথা। তেলেনাপোতা আবিষ্কার, শৃঙ্খল কিংবা স্টোভ-এর মতো গল্পের অমিত পরিমিতি এবং অমিত শক্তি আজও বহু পাঠকের বিস্ময়ের কারণ। তবু অপ্রতুলতার কারণে তার প্রায় শদুয়েক গল্পের। বেশির ভাগটাই পাঠকের অধরা ছিল। উপন্যাসে তিনি প্রায় অস্তমিত-বৈভব, কবিতায় পুরনো এক পথের উৎসুক পথিক। কেবল ঘনাদার গল্প আর ছোটগল্পে আজও তার প্রবল বেঁচে থাকা। কেবলই নিজের বৃত্তে ঘুরতে থাকা বাঙালির রকের আড্ডায় সপ্তসিন্ধু দশদিগন্তের স্বাদ এনে দেওয়াটাই তার ঘনাদার গল্পের চিরন্তন জিয়নকাঠি। কিন্তু ছোটগল্পে তার বেঁচে থাকাটা আরও বড় এক দায় নিতে পারার জোরে জীবনের কথা জীবনের ভাষায় বলার বিরাট বিপুল এক দায়। কেন লেখেন, সে প্রশ্নের উত্তরে প্রেমেন্দ্র লিখেছিলেন, লেখাটা শুধু অবসর বিনোদন নয়, মানসিক বিলাস নয়। সামনে ও পেছনের এই দুর্ভেদ্য অন্ধকারে দয়ে পণ্যময় জীবনের কথা জীবনের ভাষায় বলার বিরাট বিপুল এক দায়। উপন্যাস নয়, ছোটগল্পেই তার এই সাহিত্যদর্শন সবচেয়ে ফলবান। সে কথা মনে রেখে প্রেমেন্দ্র মিত্রের ছোটগল্পের এই নতুন সমগ্র। আধখানা হয়ে প্রকাশিত গল্প হারিয়ে যাওয়া গল্পগ্রন্থ থেকে সম্পূর্ণতা পেয়েছে। এখানে, সুদুর্লভ পত্রিকাপৃষ্ঠা থেকে সংকলিত হয়েছে নতুন অগ্রন্থিত গল্প। গল্পগুলি বিন্যস্ত। গল্পগ্রন্থের কালানুক্রমে যথার্থ সমগ্রতার পথে প্রেমেন্দ্র মিত্রের সমস্ত গল্প এবার যাত্রা শুরু করল, বলা যায়।
প্রেমেন্দ্র মিত্র ( জন্ম: ১৯০৪ - মৃত্যু: ৩ মে, ১৯৮৮) একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক। বাংলা সাহিত্যে তাঁর সৃষ্ট জনপ্রিয় চরিত্রগুলি হল ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজকর্তা এবং মামাবাবু।