উদার, সাহসী, ধার্মিক, সংস্কৃতিমনা এই মানুষটি জীবনকে ভালবাসতেন। তাই নিজের প্রতি ছিলেন যত্নবান, প্রকৃতির প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেন বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজে। তিনি একদিকে ছিলেন খুব কঠিন, অপরদিকে খুবই নরম মনের একজন মানুষ। মানুষকে কাছে টানার এক অসম্ভব শক্তি ছিল আব্বার! কথায় ও কাজে জীবনের ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার ছোঁয়া ছিল। ’৪৭-এর দেশ ভাগ, ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ তিন সময়কেই তিনি দেখেছেন। ছোটবেলা থেকে দেখা নানা পরিবর্তন নিয়ে গল্প করতেন। বই পড়ার প্রতি ছিল তাঁর ভীষণ আগ্রহ। অনেক দেরিতে হলেও আব্বার বইটি প্রকাশ হচ্ছে, মা’র সামনে তুলে ধরতে পারছিÑ এটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। যদিও আব্বা দেখে যেতে পারেননি, এ না পাওয়াটা অনেক বেশি কষ্টের! তাঁর জীবনের শেষদিকে এসে লেখা এই বইয়ে তিনি আরও প্রায় ১০০ বছর আগের ঘটনা বিবৃত করেছেন অকপটে। এখানে তিনি যে সমাজ, প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন, তা অনেকটাই বর্তমানে অকল্পনীয়! সেই রাজাপুর গ্রাম, পরিবেশ, মানুষ, মানুষের আর্থিক অবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে দিনে দিনে। তাঁর লেখায় আমাদের ছেলেবেলায় দেখা অনেক কিছুরই মিল পাওয়া যায়। দিন বদলায়, কিন্তু মানুষ কি বদলায়! তাই, ঘুনে ধরা সমাজের নেপথ্যের আদল বদলায় না সহজে, যা দেখা যায় দূরদৃষ্টি দিয়ে! চোখের দৃষ্টি কমলেও, আব্বার মনের দৃষ্টি ছিল অত্যন্ত প্রখর। আর তারই প্রকাশ ঘটেছে তাঁর এ লেখায়।