“চার্বাকের খোঁজে" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ নিজেদের সমকালীন চিন্তাজগতে বদ্ধচিন্তা ও অন্ধবিশ্বাসের অচলায়তন ভেঙে অভূতপূর্ব মুক্তচিন্তার সাহসী অগ্রপথিকই নয়, ভারতীয় জড়বাদী তথা বস্তুবাদী দর্শনের একমাত্র প্রতিভূ বলতে চার্বাক দর্শন, যাকে কখনাে কখনাে বাহস্পত্য বা ভিন্ন প্রেক্ষিতে লােকায়ত দর্শনও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চার্বাকদের অক্ষত অবিকৃত মতবাদ প্রতিফলিত হয় এরকম নিজস্ব উৎস গ্রন্থ অনেককাল আগেই দুর্ভাগ্যজনক বিলুপ্তির অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। ফলে প্রচলিত চার্বাক-বিরােধী অন্যান্য দর্শনসাহিত্যের প্রাচীন গ্রন্থগুলােয় উপস্থাপিত চার্বাক-মত এবং অধ্যাত্মবাদী বৈদিক সাহিত্য যথা বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, মহাকাব্য, নাটক, গীতা, মনুসংহিতা ইত্যাদি প্রাচীন শ্রুতি ও স্মৃতিশাস্ত্রগুলাের পরতে পরতে চার্বাকদের প্রতি বর্ষিত তীব্র ক্ষোভ, ঘৃণা ও বিরােধিতার আক্রমণাত্মক সাহিত্যদৃষ্টান্তগুলাে এবং পাশাপাশি তৎকালীন ব্রাত্য ও সাধারণ জনমানসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দার্শনিকচিন্তা-সম্মত বাৰ্হস্পত্য শ্লোক, চার্বাক-ষষ্ঠি ও প্রাচীন লােকগাথাগুলােতে প্রচলিত অপশাস্ত্র ও কুসংস্কারগুলাের বিরুদ্ধে চার্বাকদের পক্ষ থেকে যে তীর্যক পি ও শ্লেষের সমারােহ ঘটানাে। হয়েছে, এগুলাে চার্বাকী চিন্তার প্রামাণ্য দলিল হিসেবে যে অমূল্যতার দাবি রাখে তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এই বিশাল বিপুল সাহিত্য, দর্শন ও প্রামাণ্য নিদর্শনগুলাের যথার্থ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রয়ােজনীয় উপাদানগুলাে বের করে এনে ভারতীয় দর্শনের জটিল । প্রপঞ্চ থেকে চার্বাক-দর্শনের এক চমৎকার রূপরেখা সাধারণের বােধগম্য করে উপস্থাপন করেছেন রণদীপম বসু তাঁর চার্বাকের খোঁজে ভারতীয় দর্শন’ গ্রন্থে। দর্শন-চর্চা জ্ঞান-চর্চারই নামান্তর। প্রাচীন ভারতীয় দর্শন আমাদের বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার প্রাচীনতম নিদর্শন। কিন্তু। বিশুদ্ধ দর্শনচর্চায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা যে নিতান্তই হতাশাজনক তা বােধকরি বলার অপেক্ষা রাখে না। সেক্ষেত্রে রণদীপম বসু'র বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষিত ভারতীয় দর্শন সিরিজের চার্বাকের খোঁজে ভারতীয় দর্শন' গ্রন্থটি এ অপবাদ মােচনে কিছুটা হলেও গতিশীলতা আনবে তা জে দিয়েই বলা যেতে পারে।