"টুনটুনির গল্প" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ স্বভাবজাত ভাবনা-কল্পনার ভিতর দিয়ে শিশুরা প্রতিদিনের আনন্দ খুঁজে বেড়ায়। শিশুদের এই সৃজনীপ্রতিভা তৈরিতে বড়দের মুখে শােনা গল্পগুলির দারুণ প্রভাব রয়েছে। দাদা-দাদি, নানা-নানি কিংবা দিদিমা-ঠাকুরদার কণ্ঠে রূপকথা, উপকথা, জাতকের গল্প ও পুরাণকাহিনির মতাে কল্পলােকের মজার মজার গল্প শুনে শিশুদের মনের ভিতর সৃজনশীলতার প্রথম শ্রুতিপাঠ ও অভ্যাস গড়ে ওঠে। কল্পনার কোনাে আয়তসীমা নেই বলে শিশুরা এই বানানাে মজার গল্পগুলি মনের আনন্দে বারবার শুনতে আগ্রহী হয়। একবার দুবার নয়, বহুবার শুনলে বা পাঠ করলেও এর আবেদন বাচ্চাদের স্নিগ্ধ মন থেকে ফুরায় না। উপেন্দ্রকিশাের রায়চৌধুরী এইসব গল্পের অনুপ্রেরণা নিয়ে হালকা চালে শিশু-কিশােরদের মনের উপযােগী সহজ সুন্দর ভাষায় অভিনব গল্পের ধারা প্রবর্তন করেন। ‘টুনটুনির গল্প’ তাঁর শিশুসাহিত্য নিয়ে অবিস্মরণীয় বইগুলাের একটি। বাচ্চাদের মনে অভিনব আনন্দের দরােজা খুলে দিয়েছে তাঁর লেখা এই গল্পগুলাে। খেলাধুলার পাশাপাশি বাচ্চারা এই গল্পগুলাে পাঠ করে নতুন আনন্দ উপভােগের সুযােগ পায়। সম্ভবত শিশুদের প্রথম সাহিত্যিক পাঠ উপেন্দ্রকিশােরের রচনার মধ্য দিয়েই প্রবর্তিত হয়।
উপেন্দ্রকিশোরের জন্ম ১২৭০ বঙ্গাব্দের ২৭শে বৈশাখ (১৮৬৩ সালের ১০ই মে) ময়মনসিংহ জেলার মসূয়া গ্রামে, যা অধুনা বাংলাদেশে অবস্থিত। তাঁর পিতা কালিনাথ রায় ছিলেন সুদর্শন ও আরবি, ফার্সি ও সংস্কৃতে সুপণ্ডিত। তাঁর ডাকনাম ছিল শ্যামসুন্দর মুন্সী। উপেন্দ্রকিশোর শ্যামসুন্দরের আটটি সন্তানের মধ্যে তৃতীয় পুত্রসন্তান। তাঁর পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়। পাঁচ বছরেরও কম বয়সে তাঁর পিতার অপুত্রক আত্মীয় জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাঁকে দত্তক নেন ও নতুন নাম দেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। মেধাবী ছাত্র বলে পড়াশোনায় ভাল ফল করলেও ছোটোবেলা থেকেই উপেন্দ্রকিশোরের পড়াশোনার থেকে বেশি অনুরাগ ছিল বাঁশী, বেহালা ও সঙ্গীতের প্রতি। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে উপেন্দ্রকিশোর প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি পান। তারপর কলকাতায় এসে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সী কলেজে। ১৯১৫ সালের ২০শে ডিসেম্বর মাত্র বাহান্ন বছর বয়সে উপেন্দ্রকিশোর পরলোক গমন করেন।