নিজের কবিতার সাথে কবি ফয়সাল আদনানের সম্পর্ক মনে হয় অনেকটা ক্যাজুয়াল।তবে উপর চালাকি নেই কোনো; ভানও নেই যেমন। বরং আপাত উদাসীন প্রেমিকেরমত আছে এক মায়াবী সরলতা। কখনো তা অনায়াস খুনসুটিতে ক্ষেপিয়ে তুলে ব্যাক্তিগতদিন যাপনের মুদ্রাকে কখনো-বা সিরিয়াসনেসের রক্তে রঞ্জিত করে আবিশ্বসমূহ প্রশ্নেরগণিত। যখন বেঁচে থাকা করুণ ও অপ্রয়োজনে, অজস্র শিশুর চোখ যখন গুনছে ধর্ষণ ওচিৎকারের প্রকরণ আর শহরে ওয়াগনভর্তি হয়ে বিষাদ আসছে তখন লিখতে এসেছেনকবি। আর পৃথিবীর শিশুদের সামনে প্রশ্ন তুলছেন, রক্ত ও ধূলিতে মাখামাখি এ কারজরায়ু? কার নাভির নিচে ড্রামবিট ভাঙছে, রণহুংকার? ফয়সালের প্রথম বই চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে-রকম প্রশ্ন তুলতে চেয়েছে আরো। উত্তরওখুঁজতে চেয়েছে যেমন। কিন্তু তার চেয়েও বেশি করে চেয়েছে প্রশ্ন ও উত্তরের মাঝামাঝিকবির আত্মোপোলব্ধির এক সঘন বিস্তার। আর সবশেষে, সকল প্রশ্ন ও উত্তরের জঙ্গলপেরিয়ে চেয়েছে ব্যক্তিগত বেদনা ও নিরাময়ের এক মিনার ও মোটিফ। এই অনুসন্ধানেমেজাজ হারাননি কবি। স্বরটা থেকে গেছে মৃদু। যেন নাÑ থেকেও যে-প্রেমিকা রয়েছেন ঘরময় - শুধু তাঁকেই একান্তে বলতে চেয়েছেন যা কিছু বলার। অথবা কেবলই নিজেকে। ফয়সালের স্বরটি আরবান। নিজের সময়ের কোলাহল ও নৈঃশব্দের নির্যাস নিয়ে নিজেরমতো করে এক ডিকশন তৈরি করতে চেয়েছেন তিনি । বৈচিত্র্যের সমারোহ নেই তাতেকিন্তু সংযমের পুণঃপৌনিকতা একটি সাংগীতিক ধ্বনি তৈরিতে অবদান রেখেছে।অধিকাংশ কবিতা তাই প্রথানুগ ছন্দের বাইরে থাকলেও একটি ছন্দময় আবহ তৈরিহয়েছে সম্পূর্ণ বইটিতে। প্রথম বইয়ের জন্য যা এক ঈর্ষণীয় ব্যাপার। ফয়সালের প্রথম বই সপ্রমাণ এই সাক্ষ্য বহন করছে যে, ভবিষ্যতে বাংলা কবিতার একগুরুত্বপূর্ণ স্বর হওয়ার হিম্মৎ রাখেন তিনি। চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে পাঠরত থেকে আমরাঅপেক্ষায় থাকলাম কবির সেই সৃষ্টিশীল দীর্ঘযাত্রার। - সুহৃদ শহীদুল্লাহ, কবি ও অনুবাদক, অন্যতম সম্পাদক, শিরদাঁড়া