এখন বয়েস পঁচাশি। আর বিছানারও দরকার নেই তার। একটা বড়সড় ঝুড়ি থাকলে সেখানেই বেশ কুলিয়ে যায়। ঘর থাকলে ভালো, নাহলে বারান্দার কাছ ঘেঁষে বুড়িসুদ্ধ ঝুড়িটা টেনে এনে রেখে দিলেই হলো। দিনে-রাতে কিছুই তার জেগে থাকে না। জেগে থাকে শুধু দুটি চোখ। দেখতে পায় কি না জিজ্ঞেস করে তেমন লাভ নেই। কানের কাছে মুখ নিয়ে চিৎকার করে জিজ্ঞাসাটা পৌঁছে দিতে পারলে জবাবটা হয়তো পাওয়া যায়। ঘষঘষে খরখরে গলায় বলবে, সব ঝাপসা দেখি। ঝাপসা আবার কি? কিছুই দেখেন না আসলে। তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি, বলো দেখি আমি কে? ঝাপসা দেখি, কিছুই দেখতে পাই না। কালো কালো কেমন সব নড়েচড়ে। মানে বুড়ি কিছুই দেখে না, দেখে বলে মনে করে। খিদে পেয়েছে কি না জানে না, এখন জল খাবে কি না বলতে পারে না, ঘুমুবে কি না বলতে পারে না। বায়ু নিৎসরণ করতে গিয়ে দুর্গন্ধ তরল বেরিয়ে আসে, ময়লা শাড়িটা ভিজে যায় পেচ্ছাবে। জেগে আছে কি না জানে না। মরেছে না বেঁচে রয়েছে কথাটা জিজ্ঞেস করলে তার মানেও বুঝতে পারে না। চোখ দুটো একদম গোল ঘোলাটে সাদা মার্বেল হয়ে রয়েছে বহুকাল। এ দুটোই শুধু জেগে আছে। দিনে-রাতে, আলোয়- অন্ধকারে। আশ্চর্য শুধু একটি কথাই, বুড়ি নিয়মমাফিক জিজ্ঞেস করে,
সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় একটি নাম হাসান আজিজুল হক। ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান জেলার যবগ্রামে তার জন্ম । নিজের গ্রাম থেকে স্কুলের পড়া সাঙ্গ করে ওপার-বাংলায় চলে যান। তিনি, দর্শনশাস্ত্রের পড়াশোনার পর অধ্যাপনা করেন সেখানকার কয়েকটি কলেজে। ১৯৭৩ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের অধ্যাপক, এখন অবসরপ্রাপ্ত। অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘকাল অনেক গল্পের স্ৰষ্টা তিনি। গল্প অনেক লিখেছেন, কিন্তু, রহস্যময় কোনো কারণে, উপন্যাস-লেখায় বিশেষ আগ্ৰহ দেখান নি প্ৰতিভাবান এই কথাসাহিত্যিক । এ-বইটি প্ৰকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে পাঠকসমাজের উৎসুক প্রতীক্ষার যেন অবসান হলো, আমাদের হাতে এসে পৌঁছল হাসান আজিজুল হকের হৃদয়স্পশী এই উপন্যাস : ’আগুনপাখি’ ।