ফ্ল্যাপে লিখা কথা মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য আনিসুজ্জামানের প্রথম বই, কিন্তু সাড়া জাগানো রচনা। সামাজিক ইতিহাসের পটভূমিকায় এতে বাঙালি মুসলমানদের সাহিত্যকর্মের (১৭৫৭-১৯১৮) আলোচনা আছে। অনেক অজ্ঞাত পূর্ব তথ্য সাজানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাষা ও সাহিত্য ও ধর্ম, রাজনীতি ও অর্থনীতি সম্পর্কে সে সময়ের লেখকদের ভাবনা এতে উদঘাটিত হয়েছে। সে সকল ভাবনা যে সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য ছিল ,এ-বই পড়ে তা বোঝা যায়। বইটি সর্বত্র সমাদৃত হয়েছে এবং ঢাকা ও কলকাতায় তা কয়েকবার পুনর্মিদ্রিত হয়েছে।
ভূমিকা মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য আমার প্রথম বই, পাকিস্তান লেখক সংঘের পূর্বাঞ্চল শাখার উদযোগে ঢাকা থেকে বের হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। এরপর কলকাতার দুবার(১৯৭১ ও ১৯৯৯) এবং ঢাকায় (১৯৮৩) তা পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। প্যাপিরাসের এই সংস্করনটি সেই অর্থে বইটি পঞ্চম মুদ্রন হয়। এতো আগে লেখা বই অসংশোধিতভাবে এখানো যে পপাঠকের সমাদর লাভ করছে, সে আমার পরম সৌভাগ্য। এর পূর্ববর্তী সংস্করণে এই গ্রন্থ রচনার ইতিবৃত্ত বিস্তারিতভাবে বিবৃত করেছি, তার পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। আমার যৌবন কালের এই প্রয়াস পরবর্তী সময়ের লেখদের কাউকে কাউকে অনুপ্রাণিত করেছে, এমন কতা শ্লাঘণীয় মনে হয়। কল্যানীয় আনোয়ারুল হকের দৌত্যে মোতাহার হোসেন বর্তমান মুদ্রণের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁদের উভয়কেই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। আনিসুজ্জামান বাংলা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ জানুয়ারি ২০০১
সূচিপত্র * চা্রুলিপি সংস্করণের নিবেদনর মুখবন্ধ * নিবেদন * ভূমিকা: নীহাররঞ্জন রায় * চতুর্থ মুদ্রণের ভূমিকা * প্যাপিরাস সংস্করণের ভূমিকা * সংকেত সূচি * অবতরণিকা প্রথম ভাগ * দেশ ও কাল * প্রথম অধ্যায়: ১৭৫৭-১৮০০ * দ্বিতীয় অধ্যায়: ১৮০১-১৮৫৭ * তৃতীয় অধ্যায়: ১৮৫৮-১৯০৫ * চতুর্থ অধ্যায়: ১৯০৫-১৯১৮ দ্বিতীয় ভাগ * পঞ্চম অধ্যায়: মিশ্র ভারতীয় কাব্য * ষষ্ঠ অধ্যায়: মধ্যযুগের অনুবৃত্তি ও আধুনিকতার সূচনা * সপ্তম অধ্যায়: সৃষ্টিধর্মী সাহিত্য * অষ্টম অধ্যায়: তত্ত্ব ও তথ্যমূলক রচনা * নবম অধ্যায়: সৃষ্টিধর্মী সাহিত্য:দ্বিতীয় পর্ব * দশম অধ্যায়: উপসংহার
আনিসুজ্জামান একাধারে একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, ভাষা সংগ্রামী, সংবিধানের অনুবাদক এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক। এককথায় তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। এই গুণীজন ১৯৩৭ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে এক উচ্চশিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতার পার্ক সার্কাস হাই স্কুল থেকে। কৈশোরে পরিবারসমেত বাংলাদেশে চলে আসলে খুলনা শহরের এক স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে ঢাকার প্রিয়নাথ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন আনিসুজ্জামান। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতক জীবনে তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং ড. মুনীর চৌধুরীর মতো কিংবদন্তি শিক্ষকদের, যাদের সান্নিধ্যে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন এবং ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি বেশ কিছু বৃত্তি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পে অংশ নেন এবং 'কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমি স্টাফ ফেলো' হিসেবে লন্ডন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন। বর্তমানে তিনি শিল্প ও সাহিত্যকলার বিভিন্ন শাখায় জড়িত আছেন। আনিসুজ্জামান এর বই সমগ্রতে তার প্রখর চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণী ক্ষমতার পরিচয় মেলে। আনিসুজ্জামানের বইগুলো বেশিরভাগই গবেষণা এবং প্রবন্ধধর্মী। আনিসুজ্জামানের প্রবন্ধ এবং গবেষণা গ্রন্থগুলো হচ্ছে ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’, ‘আমার একাত্তর’, ’সোশ্যাল এস্পেক্টস অব এন্ডোজেনাস ইন্টেলেকচুয়াল ক্রিয়েটিভিটি’ ইত্যাদি। আনিসুজ্জামান এর বই সমূহ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'সাহিত্যে ও সমাজে', 'কালচার এন্ড থট', 'নারীর কথা', 'আইন-শব্দকোষ' ইত্যাদি। তিনি অসংখ্য পদক-পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করেছেন। সেসবের মধ্যে ১৯৭০ সালে প্রবন্ধ-গবেষণার জন্য ‘বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ১৯৮৫ সালে শিক্ষায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ‘একুশে পদক’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ২০০৫ সালে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘ডি.লিট’ ডিগ্রি প্রদান করে। ২০১৪ সালে তিনি ভারত সরকার প্রদত্ত 'পদ্মভূষণ' পদক লাভ করেন।