"নারী, পুরুষ ও সমাজ" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: নারী, পুরুষ ও সমাজ বাংলা ভাষায় নারীবাদী সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযােজন।। বহু কারণেই নারী, পুরুষ ও সমাজ গ্রন্থটি আরও বেশি সমসাময়িক হয়ে উঠছে প্রতিদিন। প্রাগৈতিহাসিক পর্বের নারীর উচ্চক্ষমতা ও মর্যাদার প্রত্নতাত্ত্বিক। নিদর্শনগুলাের সারসংক্ষিপ্ত পর্যালােচনা করে আনু মুহাম্মদ পরেকার ঐতিহাসিক সাক্ষ্যগুলােকে বিবেচনা করেছেন পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শ বিকাশের নানান পর্বে। নারীকে ক্রমাগত অধস্তন করার ধারাবাহিকতা হিসেবে। এই অধস্তনতা, একরৈখিক ছিল না বটেই - ডাইনী রূপে, বিদ্রোহী রূপে নারীর প্রতিরােধও জারি ছিল সর্বদাই। ফরাসি বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে আধুনিক পুঁজিবাদের বিকাশের সাথে সাথে নারীর সীমিত মুক্তি ঘটলেও পূর্ণতর মুক্তির জন্য নারীর লড়াই অব্যাহত ' থেকেছে। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলােতে নারীর অধিকারের বিপুল অগ্রগতি সত্ত্বেও নানান পিছুটান অব্যাহত থাকার কারণও লেখক। এই গ্রন্থে পর্যালােচনা করেছেন। নারীমুক্তির মার্কসবাদী ধারার সাথে নারীবাদের অন্য আরও নানান স্রোতের বিতর্ক ও সমালােচনার পর্যালােচনাও এই গ্রন্থের একটা উল্লেখযােগ্য দিক। নারী, পুরুষ ও সমাজগ্রন্থটির সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের। নারীর অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন। উনিশ ও বিশ শতকের নারীমুক্তির পদক্ষেপগুলাের ধারাবাহিকতায় রােকেয়ার কাজের মধ্য দিয়ে নারী মুক্তির চেতনা বিপ্লবাত্মক গতি পায়। রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করা । বাংলাদেশে নারীর মুক্তির প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ফারাকের একটা আর্থ-রাজনৈতিক পর্যালােচনা তিনি করছেন; পরিবার, উৎপাদনী ক্ষেত্র সর্বত্র নারীর পরিবর্তিত ভূমিকা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, যৌনতা, সম্পত্তির অধিকার প্রশ্নে নারীর অগ্রগতি, নারীর বন্ধন – কোন কিছুই তার পর্যালােচনার আওতার বাইরে থাকেনি। নতুন সংস্করণে যুক্ত হয়েছে সরকারী নারী নীতির একটি পর্যালােচনা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরােধী নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি - কর্তৃক প্রণীত যৌন নিপীড়ন বিরােধী নীতিমালা। নারী, পুরুষ ও সমাজগ্রন্থটি বিদ্যায়তনিক মহল এবং নারী মুক্তির আন্দোলনের কর্মী সকলের জন্যই একটি জরুরি গ্রন্থ।
(জন্ম: ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬) পুরো নাম আনু মুহাম্মদ আনিসুর রহমান হলেও আনু মুহাম্মদ নামেই অধিক পরিচিত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক। ঢাকায় লেখাপড়া শেষ করে ১৯৮২ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেন। এছাড়া একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগেও শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী শোষণ, বৈষম্য, নিপীড়ন ও আধিপত্য বিরোধী তত্ত্বচর্চা ও লড়াইয়ে সক্রিয় অংশ নেন। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ যে কোন প্রকার নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তিনি তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব। বাংলাদেশে মার্কসীয় অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি সংক্রান্ত আলোচনায় তিনি সবচেয়ে পরিচিত লেখক।