দার্জিলিং নিয়ে সাহেবদের নস্টালজিয়া আর বাঙালির রোমান্সের আড়ালে চাপা পড়ে আছে বিভিন্ন জনজাতির মানুষে বোনা এক আশ্চর্য নকশিকাঁথা। নয়ের দশকের গোড়ায় জীবিকার টানে গিয়ে তার খোঁজ পেয়েছিলেন লেখক। সেখানে তখন এক আন্দোলনের আগুন সবে নিভেছে। দুই দশক বাদে ফের উত্তপ্ত পাহাড় মুখোমুখি হয়েছে এক অমোঘ প্রশ্নের : দার্জিলিং, তুমি কার? উত্তরের খোঁজে লেখক ঘুরেছেন স্মৃতি আর ইতিহাসের গলিঘুঁজিতে – নিঃসঙ্গ প্লান্টারের চিঠিপত্র থেকে পাইস হোটেলের মেনুবোর্ড, রাগী তরুণের ব্লগ থেকে প্রাচীন কবরের এপিটাফ প্রত্নতাত্ত্বিকের চোখ দিয়ে খুঁড়ে এনেছেন দার্জিলিঙের পথে-ঘাটে ছড়ানো সময়ের চিহ্ন, মানুষের মুখের জ্যামিতি, জীবনের জলছবি। ভিড় করে এসেছে বিচিত্র মানুষেরা : এক মালয়ালি যুবক ও তার মর্মন্তুদ কাহিনী, হারানো উপজাতির সন্ধানে আসা ব্রিটিশ তরুণী, এক লিম্বু বৃদ্ধা ও তাঁর রক-গায়ক প্রপৌত্র, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা' ছবির ভিখারি বালকের ছায়া, চকবাজারের পোর্টার, চা-বাগানের কামিন ... এ ছাড়া এসেছে প্রকৃতি : ঝিঁঝিদের রোমান্স ও তার তানবিধি, ডায়ানোসরের যুগের সালামান্ডারের জীবনচক্র, দুষ্প্রাপ্য পাখির ডানার রং, ঝোরার শব্দ, বর্ষাশেষের প্রথম মেঘভাঙা আলো ও বিখ্যাত কুয়াশা। দার্জিলিঙের পাকদণ্ডী পথের মতোই এই রচনার বয়ান এগিয়ে চলে ভূগোল থেকে ইতিহাসে, স্মৃতিকথা থেকে সমাজতত্ত্বে। এক নতুন রীতির লেখা।