প্রশাসন কেমন যে স্থবির হয়ে আছে। সারাদেশ একটি মাত্র ইস্যুতে আজ সােচ্চার। সবাই চায় মুক্তি। এতদিন পশ্চিম পাকিস্তান যে শােষণ করেছে, তার শেষ দেখতে চায় পূর্ব পাকিস্তান। অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেছে দেশবাসী। জনগণের এই গণরােষকে প্রতিরােধ করা কঠিন। জনগণের মাঝে দলমত জাতিধর্ম নির্বিশেষে একটি ঐক্য গড়ে উঠেছে। এটা একটি জাতির জন্য পজিটিভ দিক নিঃসন্দেহে,পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এখন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছে, তাদের কাছে। পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস্ পার্টি সেই প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও দুই প্রদেশ মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ। কেন এই বিলম্বঃ ইয়াহিয়া খানের মনের ভেতর অন্য কোন অভিসন্ধি আছে কিনা কে জানে। তবে দেশবাসী কিছুটা সন্দেহের ভেতর দীর্ণ হচ্ছে। সবকিছুতেই কি রকম এক অনিশ্চয়তা। রাজনীতি আর এখন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আবদ্ধ নেই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষরা প্ল্যাকার্ডসহ স্লোগান দিতে দিতে মেডিকেলের কাছে শহীদ মিনারে জড়াে হচ্ছে। এ যেন মানুষের তীর্থক্ষেত্র। সবার কণ্ঠে একটি মাত্র শ্লোগান : বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, পূর্ব-পাকিস্তান স্বাধীন কর। দীর্ঘ দিনের শােষণ ও বঞ্চনা থেকে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের মানুষ মুক্তি চায়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি। ২৩ বছর যেতে না যেতেই বাঙালীরা একটি নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছে। পৃথিবীর ইতিহাসে সব বঞ্চনারই একটি সমাপ্তি আছে। ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ইতিহাসের নিয়মে ঘটে থাকে।